চরফ্যাশনে শক্তি”র প্রভাবে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

• শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত • বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

চরফ্যাশন প্রতিনিধি:

ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি”র প্রভাবে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর পানি বৃদ্বি পেয়ে ভোলার চরফ্যাশনের নিম্নাঞ্চল ৪-৫ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ঢালচর, চর মোতাহার, চর মানিকা, কলমি ও চর কুকরি মুকরি সহ উপজেলার প্রায় ৫০টি চরের মানুষ পানি বন্দি হয়েছে। এছাড়াও টানা বৃষ্টিপাতে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে । গেল ২৪ ঘন্টায় জেলায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভোলা আবহাওয়া দপ্তর ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতা দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে এবং উপজেলা জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ করে উপজেলার হাজারী গন্জ ইউনিয়নের খেজুর গাছিয়া বেড়ি বাধ ভেঙ্গে যাওয়ার খবরে জলোচ্ছাসের আতঙ্ক দেখা দেয় উপকূলবাসীর মধ্যে। বাঁধের দুর্বল অবস্থার জন্য ওইসব এলাকার বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশসহ রাজনৈতিক দলের কমীরা বাড়ি বাড়ি মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্র পাঠানোর চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারলেও বেশিসংখ্যক মানুষ রয়েছেন পানিবন্দি।

এদিকে উপজেলার সাগরকূলের চর কুকরি মুকরি, মজিব নগর , চরপাতিলার ঢালচরসহ মেঘনা ও তেঁতুলিযা নদীর মধ্যবর্তী চরাঞ্চালগুলো প্রায় ৫ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওযায চরম দুর্ভোগে পডেেছন সেখানকার বাসিন্দারা। তীব্র বাতাস আর উত্তাল মেঘনা- তেতুলিয়ার জোয়ারের পানিতে হুমকির মূখে রয়েছে ৬.৪ কি;মিটার বাঁধ। এছাড়াও সকাল থেকে উপজেলার ৭টি নৌ-রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। জেলেরা তাদের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার নিয়ে নিরাপদে চলে এসেছেন। ঢালচরের বাসিন্দা সোহেল রান জানান, ঢেউযরে সঙ্গে সঙ্গে ঢালচরে নদীভাঙনও বেড়ে গেছে। চরের বাসিন্ধারা বসতঘর সরিয়ে নিতেছে । ঢালচর মাছ ঘাটের ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিক দোকানপাট সরিয়ে নিতে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এ ছাড়া ঢালচর ও চর নিজামে ১০০টি কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিযেেছন স্থানীয় বাসিন্ধা জাহাঙ্গীর হাওলাদার । চরফ্যাশনের চেযারম্যান বাজার এলাকায কয়েকটি গাছপালা ভেঙে পড়ার খবর পাওযা গেছে।

এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ও সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে গত বুধবার (২৭ মে) সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার (৩০ মে) দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে পুরো চরফ্যাশন। বিদ্যুৎ না থাকায় বিঘ্ন হচ্ছে টেলিযোগাযোগ সেবাও। অধিকাংশ এলাকায় বন্ধ রয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট। এছাড়া দেখা দিয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক জটিলতা।

চরফ্যাশন জোনাল অফিসার মো মিজানুর রহমান জানান, বুধবারর সন্ধ্যার পর থেকে জেলার অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়েছে। চরফ্যাশনেও ঝড়ের গতি বেশি। বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ছে। এসব কারণে পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বাতাসের গতি কমে গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হবে। ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো ইউসুফ জানান, ঝড়ো বাতাসের কারণে বিদ্যুৎ লাইনগুলো ঘনঘন ট্রিপ করছে। লাইনের পাশের গাছপালা তারের ওপর পডলেই লাইন বন্ধ হয়ে যায। অতি বৃষ্টির কারণে বোরহানউদ্দিন বিদ্যুৎকেন্দ্রেও সমস্যা দেখা দিযেেছ। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে তাদের কর্মীরা বৈরী আবহাওযার মধ্যেও কাজ করছেন।

আজ শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার বেতুয়া লঞ্চ ঘাট, হাজারীগঞ্জ ও জাহানপুর ইউনিয়নসহ বেশকিছু এলাকায ঘুরে দেখা গেছে, ঘুর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে বেড়িবাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ঘাটে নোঙ্গর করা প্রায় শতাধিক ছোট-বড় নৌকা ও মানুষের ঘরবাড়ি, মাছের ঘের, পুকুর তলিয়ে গেছে।

চরফ্যাশন পানি উন্নযন বোর্ড-০২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায বৃহস্পতিবার জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি জানান, ঘূর্ণিঝড় শক্তি মোকাবেলায় উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। উপজেলায় ২৫৬ টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এবং প্রায় ৩০০ এর ওদিক স্বেচ্ছাসেবী মোতায়ন করা হয়েছে।তিনি ও উপজেলা যুবদল সাবেক সভাপতি দিপুফরাজী খেজুর গাছিয়া ঝুঁকিপূর্ন বেড়ি বাঁধ পরিদর্শন গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলছেন।

চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর, চর কুকরি-মুকরি ও মুজিবনগর ইউনিয়ন মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মধ্যে জেগে ওঠা এসব চরে বন্যা-জলোচ্ছ¦াস নিয়ন্ত্রণে কোনো বাঁধ নেই। নেই পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র।

 

 

এই বিভাগের আরো খবর