আজকের শিশু আগামীর স্বপ্ন

আলমগীর খোরশেদ:

একজন শিশু জন্ম নেয় বাবা মায়ের আনন্দ, সুখ ও ভবিষ্যতের ধারক হিসেবে।  শিশুরা হয় পরিবার, সংসার, সমাজ, রাষ্ট্রের  প্রতিনিধি। একটি  জাতির ভিত্তি।   আজকের শিশুই আগামী দিনের কান্ডারি।

জাতিসংঘ ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার সনদ ঘোষণা করে কিন্তু তার ১৫ বছর পূর্বেই ১৯৭৪ সালে সর্ব কালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি, জ্যুলিও কুরী উপাধি প্রাপ্ত বিশ্বনেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে  বাংলাদেশে  শিশু আইন প্রণীত হয়।

দূরদর্শী নেতা বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন,  শিশুদের সুরক্ষা ও সার্বিক উন্নয়ন ছাড়া একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠন সম্ভব নয়।  জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের বেশি হলো শিশু। শিশুদের সমান অধিকার ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে বর্তমান সরকার। অটিস্টিক, মানসিক শারিরীক ভাবে চাহিদা সম্পন্ন শিশুরাও এর আওতাভুক্ত।

বছরের প্রথমেই আনন্দে মেতে উঠে শিশুরা  বিনামূল্যে বই পেয়ে, চালু হয়েছে  মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম , উপবৃত্তি প্রদান, মেয়েদের বিনামূল্যে লেখাপড়া,  কমেছে শিশুমৃত্যু হার, শিশুদের পুষ্টি নিরাপত্তা, হাতের মুঠোয় বিশ্ব এসেছে ইন্টারনেটের বদৌলতে। গ্রামে পাড়ায় এখন ওয়াইফাই। সহজলভ্য হয়েছে এখন ইন্টারনেট।

তথ্য প্রযুক্তি এখন শিশুদের কাছে নতুন শব্দ নয়। বিদেশে থাকা সন্তানের সাথে কৃষক বাবা কথা বলেন ভিডিও কলে। আছে সৃজনশীলতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিযোগিতা ও পুরস্কারের ব্যবস্থা, হয়েছে শিশু শ্রম নিরসন আইন, যৌতুক বিরোধী আইন নেওয়া হয়েছে বাল্যবিবাহ বন্ধের উদ্যোগ। অনেক মেয়ে মুক্তি পেয়েছে  বালিকাবধূ থেকে। শিকড় হীন শিশুদের পূর্ণবাসন তথা পথমুক্ত শিশু গড়ার লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ চলমান।

মা ও শিশু মৃত্যু রোধের জন্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। শিশুদের টিকাদান কর্মসূচী সফলভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্জন করেছেন ” ভ্যাকসিন হিরো” অ্যাওর্য়াড। পাল্টে গেছে সামগ্রিক জীবন তাই শিশুদের নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে। মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালির সংগ্রামী ইতিহাস বাঙালিয়ানা নিয়ে শিশুদের বুঝাতে । পরিচয় করিয়ে দিতে হবে প্রকৃত ইতিহাসের সাথে।

ইতোমধ্যে ঘোষিত হয়েছে  জাতীয় শিশুনীতি–২০১১, শিশু আইন –২০১৩, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন–২০১৭, শিশু নির্যাতন দমন আইন–২০২০, শিশু দিবাযত্ন ডে কেয়ার সেন্টার। সব গুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে গড়ে উঠবে শিশু বান্ধব বাংলাদেশ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ আগে স্বপ্ন ছিল। নিন্দুকেরা মুখ বাঁকা করে বলতো, ” না, এটা সম্ভব না”। আজ বিশ্বে বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে, বাঙালি পারে। স্বঅর্থায়নে পদ্মাসেতু সাফল্যের  আরেক ম্যাগনেকাটা, স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাঙালির আরেক ঐতিহাসিক প্রেসটিজিয়াস অর্জন। বাঙালি বীরের জাতি। রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের দেশের মানুষ। বাঙালি বাঘের মত  এক পিছালেও দুপা সামনে ঝাঁপাতে জানে।

কুসংস্কার পূর্ণ আঁধার ছাড়িয়ে আজকের শিশুদের নিয়ে যেতে হবে বাস্তব সম্পন্ন জীবন ধারায়। ঠাকুর মার ঝুলির রাজকুমার আর রাক্ষস খোক্কস থেকে বেড়িয়ে আনতে হবে বিজ্ঞান, স্যাটালাইট, নভোযান ও ন্যনো টেকনোলোজির ভার্সনে। সৎ, মানবতা, পারিবারিক ঐতিহ্য নিয়ে যে সন্তান এগিয়ে যায়, তার জয় হবেই।

সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পূর্ণবাসন ও বিকাশে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাতা পিতা পরিবার সবাইকে সংযুক্ত করে গড়তে হবে আগামী প্রজন্ম।

কল্যাণকামী,  জীবনবাদী ও সৌন্দর্যে ভরপুর হয়ে গড়ে উঠুক একটি জাতি। শিশুদের হাতে আসবে আগামি দিনের নেতৃত্ব। শিশুদের জন্য সামাজিক পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব বড়দের। শিশুদের সাথে সময় কাটানো, ওদের আগামি পথের সঠিক তথ্য ও জ্ঞান দিয়ে গড়ে উঠবে একটি সভ্য জাতি ও নতুন দিনের নেতা। আমরা আছি, থাকবো আগামী দিনের জয়যাত্রায় নতুনত্বের সংযোজনে।  বিশ্ব শিশু দিবসে এটাই হোক প্রত্যাশা।

সভাপতি

শিশু মনে শেখ হাসিনা

 

এই বিভাগের আরো খবর