‘শক্তি’র হুংকারে কাঁপছে উপকূলের মানুষ

শিপুফরাজী :

ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি”র ধেয়ে আসার খবরে চরফ্যাশনের দক্ষিণ উপকূলের সাগর পাড়ের মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পরেছে। পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় জনবসতিপূর্ণ এসব দ্বীপে অর্ধলাখ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। নদী-সাগর উত্তাল হয়ে উঠায় বৃহষ্পতিবার বিকেল থেকে এসব দ্বীপের সাথে মূল ভূখন্ডের সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে দ্বীপগুলোতে আটকে পড়া মানুষের নিরাপদে মূল ভূখন্ডে সরে আসার সুযোগও নেই বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।এদিকে ‘শক্তি”র সম্ভাব্য আগ্রাসন থেকে জনগনকে সুরক্ষা দিতে উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে অগ্রীম প্রস্ততি নেয়া হয়েছে।উদ্ভুত যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় দূর্যোগ কালে আশ্রয় গ্রহনের জন্য উপজেলার ২ শ’৬৫টি স্কুল কাম আশ্রয়কেন্দ্র খুলে রাখতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদ্বকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র গুলোতে আপদকালিন খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পরিমানে শুকনো খাবার মজুদ এবং ইউনিয়ন পরিষদগুলোর মাধ্যমে সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়াও উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচীর আওয়ায় উপজেলার ১৬৫টি ইউনিটে ২হাজার ৪শ’ স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তত রাখা হয়েছে।

জনসাধারনকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য গতকাল বৃহসপতিবার বিকেল থেকে ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচীর স্বেচ্ছাসেবকরা প্রচার শুরু করেছেন। এদিক ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি”র প্রভাবে গতকাল বৃহসপ্রতিবার সকাল থেকে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এছাড়া জেলার মেঘনা-তেতুলিয়া নদীতে জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে চরফ্যাশন উপজেলা জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয। কখনো মুষলধারে আবার কখনো থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সাগর উত্তাল ছিল। গতকাল বুধবার রাতে প্রথম জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত ৩ ফুট উচ্চতার জোয়ারে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে ।

ঢালচর,কুকরীসহ চরফ্যাশনের বিচ্ছিন্ন ও দ্বীপগুলো অধিক উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। রাতের জোয়ারে পানির উচ্চতা আরও বাড়বে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সাগর উত্তাল থাকায় মাছধরা নৌকা ও ট্রলারগুলো নিয়ে জেলেরা ঘাটে ফিরতে শুরু করেছেন। ঢালচর ঘাটের জেলে নুরে আলম জানান, কাছের সাগরে থাকা সব জেলেরা ঘটে ফিরেছে। তবে দূর সাগরে অবস্থান করা জেলেরা এখনো ঘাটে ফেরেনি। তারা আদৌ নিজনিজ ঘাটে ফিরবেন কি না এ নিয়ে সংশয় আছে।

এদিকে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় দক্ষিণ উপকূলের দ্বীপ ইউনিয়ন ঢালচর এবং কুকরী মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। বুধবার থেকে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। সব ধরণের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে দ্বীপ থেকে করো সরে যাওয়ার উপায় নেই। গতকাল বৃহষ্পতিবার রাতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ ফুট উচ্চতার জোয়ারে ঢালচর প্লাবিত হয়েছে। রাতের জায়ার আরো বেশী হতে পারে। এই দ্বীপ ইউনিয়নের ১৫ হাজার মানুষের জন্য মাত্র একটি আশ্রয়কেন্দ্র আছে। যাতে সর্বোচ্চ ৫শ’ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। ফলে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি”র ধেয়ে আসার খবরে দ্বীপের মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পরেছে।নৌযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পরা অপর ইউনিয়ন কুকরী-মুকরী ইউনিয়নের ১৭ হাজার মানুষের জন্য মাত্র ৮টি স্কুল কাম আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। যেগুলোতে ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। দিনের জোয়ারে দ্বীপের উপরিভাগ স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় রাত এগিয়ে আসার সাথে বাড়ছে আতংক।

তেতুলিয়া পাড়ের মুজিব নগর ইউনিয়নের ১৮ হাজার মানুষের জন্য আছে ৫টি স্কুল কাম আশ্রয় কেন্দ্র। মুজিব নগর ইউনিয়নের লোকজন, ঘুর্ণিঝড় ‘শক্তি”র ধেয়ে আসার খবরে দ্বীপের মানুষ সরে যেতে শুরু করেছে।

 

এই বিভাগের আরো খবর