আখাউড়া প্রতিনিধি:
ভারত থেকে দেশে ফিরে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এক নারী—ফারজানা আহমেদ নিপা (১৮)। পারিবারিক কলহ, দারিদ্র্য আর দালালের প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়েই তিনি পড়েন আইনি জটিলতায়। ত্রিপুরায় নয় মাস কারাবাস শেষে বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছেন তিনি।
পারিবারিকভাবে সুখেই চলছিল নিপার জীবন। চার বছর বয়সী মেয়ে ইকরা বিনতে আরিশা ও স্বামীকে নিয়ে সংসার করছিলেন তিনি। পেশায় একজন দক্ষ বিউটি পার্লার কর্মী ছিলেন নিপা , নয় মাস আগে সমিতি থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়ার জেরে রাগের মাথায় তিনি যোগাযোগ করেন ভারতের কলকাতায় অবস্থানরত এক বান্ধবীর সঙ্গে। ওই বান্ধবী জানান, ভারতে বিউটি পার্লারে ভালো বেতনের চাকরি পাওয়া যাবে।
সেই আশায় কুমিল্লার একটি অবৈধ সীমান্তপথ ব্যবহার করে দালালের মাধ্যমে ত্রিপুরার গোমতী জেলার সীমান্তে প্রবেশের চেষ্টাকালে ধরা পড়েন ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে। পরদিনই তাকে পাঠানো হয় গোমতী জেলা কারাগারে।
নিপা বলেন, “গোমতীর কারাগারে অন্তত ১০ জন বাংলাদেশি নারী কারাভোগ করছেন। তারা সকলেই কোনো না কোনোভাবে দালালের খপ্পরে পড়ে ভারতে গিয়েছেন। অনেকে মহারাষ্ট্র ও কলকাতায় পাচার হয়ে গেছেন। এমনকি কিছু মেয়েকে কাজের কথা বলে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয় যৌনপল্লীতে।”
কারাগারে নিপার সঙ্গে পরিচয় হয় এক বাংলাদেশি কিশোরীর, যাকে কুমিল্লা দিয়ে পাচার করে শিলচরের একটি যৌনপল্লীতে পাঠানো হয়েছিল। নিপা জানান, “ওই কিশোরীকে সেখানকার একটি কক্ষে আটকে রাখা হতো। পরে সেখান থেকে পালিয়ে ফেরার পথে বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে, এখন সে-ও কারাগারে আছে।”
প্রায় নয় মাসের কারাবাস শেষে অবশেষে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের উদ্যোগে এবং দুই দেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফেরেন নিপা। ওই সময় তার সঙ্গে আরও ১০ জন বাংলাদেশিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নিপাকে গ্রহণ করেন তার স্বামী ও স্বজনেরা। মেয়েকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিপা। তিনি বলেন, “কল্পনাও করতে পারিনি কেউ আমাকে এ নরক থেকে উদ্ধার করবে। দেশে ফিরব, মেয়ের মুখ দেখব—এ স্বপ্নও দেখিনি।”
ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের দূতালয় প্রধান মো. আলমাস হোসেন এবং কর্মকর্তা ওমর শরীফ উপস্থিত থেকে নিপাসহ ১১ জনকে পরিবারের হাতে তুলে দেন।
ওমর শরীফ জানান, “ত্রিপুরার বিভিন্ন কারাগার ও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা নিয়মিত চেষ্টা করে যাচ্ছি।”