সরকারি মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদান করে আসা শিক্ষকরা আজ চাকরি ও জীবনের চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। এ অবস্থার প্রতিবাদে খুলনায় আয়োজিত এক মানববন্ধনে শিক্ষক, কেয়ারটেকার, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের ক্ষোভ, হতাশা এবং বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন।
শনিবার (১৭ মে) সকাল ১০টায় খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে জেলার প্রায় সাত শতাধিক শিক্ষক, কেয়ারটেকার, নারী-পুরুষ শিক্ষক, মসজিদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ব্যানার-ফেস্টুন হাতে কর্মসূচিতে দাঁড়ানো মানুষগুলোর চোখে ছিল গভীর অনিশ্চয়তা আর কণ্ঠে ছিল দীর্ঘদিনের অবহেলার ক্ষুব্ধ উচ্চারণ।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষিকা রোখসানা আক্তার বলেন, প্রতিমাসে মাত্র কয়েক হাজার টাকা বেতন পাই, সেটাও এখন পাঁচ মাস ধরে বন্ধ। ঈদ সামনে, বাজারে দাম বাড়ছে, বাসায় সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। আমরা কি মানুষ না? আমাদের পরিবার নেই?
এমন অসংখ্য শিক্ষক আছেন যারা জীবনভর ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারে কাজ করেও আজ পরিবার নিয়ে টিকে থাকার লড়াই করছেন। অথচ, বক্তারা বলছেন—প্রকল্পটির ধারাবাহিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণিত হলেও আজও তা স্থায়ী রূপ পায়নি।
১৯৯৩ সাল থেকে ইসলামী ফাউন্ডেশনের অধীনে ‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম’ প্রকল্পটি চালু হয়। বর্তমানে এর ৮ম পর্যায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে শিক্ষকরা বলছেন, এর ভবিষ্যৎ নিয়ে রয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা।
শিক্ষকদের পাঁচ দফা দাবি’র মধ্যে রয়েছে—প্রকল্পটিকে আউটসোর্সিংয়ের আওতায় আনার চক্রান্ত বন্ধ করা, সব জনবলকে রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত করা, পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস দ্রুত পরিশোধ, পদোন্নতির সুযোগ চালু ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও অবসর, দুর্ঘটনা বা মৃত্যুজনিত আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠন।
বক্তারা বলেন, যে দেশের সরকার ইসলামিক শিক্ষা বিস্তারে প্রতিশ্রুতি দেয়, সে দেশের ধর্মীয় শিক্ষকরা বছরের পর বছর উপেক্ষিত থাকেন। এই বৈপরীত্যের অবসান হওয়া জরুরি। আমরা শুধুই কুরআন শিক্ষা দিই না, নৈতিকতা শেখাই, চরিত্র গড়ি—কিন্তু নিজেদের ভবিষ্যৎই আজ অন্ধকার।
আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, এ প্রকল্পের সফলতা নিয়ে সরকার যতবার আত্মপ্রচারে গর্ব করেছে, বাস্তবে ততবারই কর্মরত শিক্ষকরা থেকেছেন অবহেলায়। প্রকল্পটিকে যদি আউটসোর্সিংয়ের আওতায় আনা হয়, তাহলে তার আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতাই ধ্বংস হবে।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষকরা খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। দাবি আদায় না হলে আগামীতে বিভাগীয় কর্মসূচি, মহাসড়ক অবরোধ এবং ঢাকায় কেন্দ্রীয় অবস্থান কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেন তারা।