জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের দপ্তরে তদবির ঘুষ-বাণিজ্যের রাজত্ব!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে ‘ভূত তাড়ানো সরিষার ভেতরেই ভূত’ কিন্তু, যদি সেই সরিষাতেই ভেজাল থাকে, তবে ভূত তাড়ানো যাবে? বলছি, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দপ্তরেও কথা। বর্তমান চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর, এক এক করে প্রতিটি অফিসের সিন্ডিকেটকে ভেঙ্গে দিয়েছেন এবং বিভিন্ন জায়গায় বদলি করেছেন। ব্যবস্থা নিয়েছেন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

 

এবার অভিযোগ উঠেছে, খোদ চেয়ারম্যানের দপ্তরে ঘুষ-বাণিজ্যের রাম রাজত্ব অভিযোগ। একটি শক্তিশালী দালাল ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছেন চেয়ারম্যানের পিএ নাহিদ আরমান। চেয়ারম্যানের সুপারিশ বিক্রি করেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়। চেয়ারম্যান এর সাথে সাক্ষাৎ করতে টাকা নিয়ে থাকেন। লিজ দলিল, বরাদ্দ পায়ে দেওয়ার কথা বলে, সংশোধনী বরাদ্দ, প্রতিটি ফাইল এর উপরে সুপারিশ করতে টাকা নেন নাহিদ আরমান। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেলেও নিজের পিএ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

 

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে ভূমি শাখার একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করেন একটি সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে চেয়ারম্যানের পিএ নাহিদ আরমান বিরুদ্ধে অনিয়ম, জালিয়াতি, ঘুষ গ্রহণ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে। কিন্তু অদ্যাবধি পর্যন্ত নিজের পিএ বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি, উল্টো প্রমোশন দিয়েছে তাকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৃহায়ণের একজন কর্মকর্তা জানান, নাহিদ আরমান সিন্ডিকেট হর্তাকর্তা। দীর্ঘদিন যাবৎ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছেন তিনি।

 

 

এই সিন্ডিকেটকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে আসছেন নাহিদ আরমান।

 

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ অধিদপ্তর ঘিরে দীর্ঘদিন যাবৎ একটি শক্তিশালী দালাল ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থেকেও বার বার পার পেয়ে যাচ্ছিল। আর এই সিন্ডিকেটকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে আসছেন প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী শক্তিশালী একটি গ্রুপ। গোয়েন্দা বিশেষ অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উঠে আসছে এক ডজন কর্মকর্তার-কর্মচারীর অনিয়ম দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য।

 

তদন্তে প্রতিবেদনে জানা যায়, কর্মকর্তাদের একটি বিশাল সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন, যেখানে ভূমি শাখার বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যুক্ত। এর মধ্যে আছেন মোঃ নাহিদ আরমান সহ অন্যান্য সদস্যরা। এই সিন্ডিকেটটি মিরপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ভূমি ও সম্পত্তির অবৈধ লীজ প্রক্রিয়া চালাচ্ছে এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে।

 

এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র/নথি সৃজন করে মিরপুর এলাকার বিভিন্ন সেকশনে প্লটের লীজ দলিল করেছেন এবং কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ভূমি শাখার কর্মকর্তা কর্মচারীরা অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

 

খবর নিয়ে আরও জানাযায়, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে আলীশান ফ্ল্যাট ক্রয় করেছে। নিজের নামে সরকারী যে কোয়াটার পেয়েছেন তাও ভাড়া দিয়ে রেখেছেন।

মিরপুর ২ নং সেকশন ষ্টেডিয়ামের পশ্চিম দিকের এগারো নং রোডের পূর্ব মাথায় মেইন রাস্তার পার্শে একটা প্লটও রয়েছে, যদিও সেটি নিয়েছেন শ্বশুরের নামে। যাহা আবাসিক থেকে বানিজ্যিক অনুমতি নিয়েছেন নিজ প্রভাব খাটিয়ে। মিরপুর ১ নং সেকশনের একটি পুনর্বাসন প্লটের মালিকের কাছ থেকে ১৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে এর আগে বদলীও হয়েছিলো রাজশাহী। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে থেকে যান ঢাকায়। স্ত্রী শ্বশুর পিতার সহ নামে বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য মোঃ নাহিদ আরমান, হিসাব সহকারী হিসেবে চাকরির যোগদান করেন। তিনি বর্তমানে চেয়ারম্যানের পিএ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শক্তিশালী এই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবৎ নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় রয়েছেন তিনি। এই সিন্ডিকেটকে প্রত্যক্ষ

 

ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে আসছেন। প্রতিবেদনটি সরকারী কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেছে যে, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বদলি এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

 

এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের পিএ মোঃ নাহিদ আরমানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এই বিভাগের আরো খবর