স্টাফ রিপোর্টার:
জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, (এনসিপি)’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ইতোমধ্যে স্পষ্ট করেছেন, আমাদের সাথে তাদেরই জোট হবে; যারা সংস্কারের পক্ষে, যে ২৪ জনআকাঙ্খার কারণে ঘটেছে, দীর্ঘ দেড় বছরের ফ্যাসিবাদের লড়াইয়ের ক্ষোভের যে বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আমাদের রাষ্ট্র, সাংবিধানিক রাষ্ট্রের কাঠামোর যে দুর্বলতা, সেগুলোর উত্তোরণে যারা আমাদের পাশে আসবে, তারা আমাদের সাথে থাকবে, তাদেরকে নিয়েই আমাদের জোট হতে পারে। দলীয় কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষে২ নভেম্বর (রবিবার) দুপুরে ভোলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র জেলা সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির ভাষণ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে আজকে পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচী, নীতিনির্ধারণ কিন্তু মানুষের কাছ থেকেই এসেছে। জনগণের প্রত্যাশা, জনগণের চাওয়া, জনগণের আকাঙ্খাকেই আমরা রাজনৈতিক কর্মসূচীতে পরিণত করি। এনসিপি যারা করে তারা ছাড়াও এই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছে, সেই সব মানুষ চায় এনসিপির মার্কা হওয়া উচিত শাপলা। কোন নীতিমালার আলোকে শাপলা প্রতিক দেয়া হচ্ছে না তার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকেই প্রশ্ন করা উচিত।
হাসনাত বলেন, আমরা দেখছি এটা পক্ষ শাহাবুদ্দিন চুপ্পুর কাছ থেকে জুলাই সনদের স্বাক্ষর নিতে চায়। যদি চুপ্পুর কাছ থেকে জুলাই সনদের স্বাক্ষর নেয়া আর আত্মহত্যা করা সমান কথা। তার হাত থেকে সনদ নিতে হয়, তা হলে আমাদের সবাইকে নদীতে ডুবে আত্মহত্যা করাই শ্রেয়। জুলাই আন্দোলনে ঢাকার পর দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছে এই ভোলাতে। তাদের পরিবার যদি জানে চুপ্পু সার্টিফিকেট দিচ্ছে এই জুলাইয়ের, তাহলে তারা সবাই একসাথে আত্মহত্যা করবে। যারা আহত হয়েছে তারাও আত্মহত্যা করবে।এই ঘোষণাপত্র দেয়ার কেবলমাত্র বৈধতা রয়েছে এই গণঅভ্যুত্থান। যেহেতু গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূছ এসেছেন, ওই এটার আদেশ দিবেন এবং তা দ্রুততম হতে হবে, কোন অধ্যাদেশ নয়।
মুখ্য সংগঠক আরো বলেন, আজকের সভা থেকে ভোলাবাসীর পক্ষ থেকে কিছু দাবী জানানো হয়েছে। এই দাবীগুলো খুবই প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশর একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলার মানুষ ভোলা-বরিশাল সেতুর ব্যাপারে দীর্ঘদিন যাবত দাবী জানিয়ে আসছেন। সেই ভোলা-বরিশাল সেতু যেন দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন হয় তা সফল কারার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে যা করার আমরা তাই করবো। এছাড়া ভোলার স্বাস্থ্য সেবার যে নাজুক ও ভঙ্গুর অবস্থার বিয়ষটি নিয়েও কথা উঠেছে। ভোলায় যে গ্যাস ও খনিজ সম্পদ রয়েছে সেটি যেন ভোলাবাসীর কল্যাণে ব্যবহার হয়। ভোলাবাসীর ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবীর সাথে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সবসময় পক্ষে রয়েছে। ভোলা-বরিশাল ব্রিজ, স্বাস্থ্য সেবার উন্নতি করণ এবং খনিজ সম্পদের যেন যথাযথ ব্যবহার হয়; এই বিষয়ে দাবী আদায়ে এনসিপি ভোলাবাসীর সাথে আন্দোনল করবো এবং দাবী আদায়ে আমরা সহযোগী ভূমিকা পালন করবো।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা উচ্চকক্ষে পিআর চাই, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিন্মকক্ষে পিআর চাই। জামায়াতে ইসলামী যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবী জানিয়ে আসতে আমার মনে হয় তারা সেই দাবী থেকে সরে এসেছে। আমার এটাও মনে হয় যে, দিনশেষে এনসিপি যে অবস্থান নিবে, সব রাজনৈতিক দলগুলোও সেই অবস্থান নিবে। সংখ্যাগত জায়গা থেকে নয়, গুনগত থেকেই শক্ত অবস্থানে রয়েছি।
তিনি আরো বলেন, যারা দীর্ঘদিন যাবত ফ্যাসিবাদ লড়াই করেছেন তাদের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে। বিএনপির এমন কোন তৃণমুলের নেতা-কর্মী নেই যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় নাই। তৃণমূলের যে নেতা-কর্মীরা রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, বাড়ীতে ঘুমাতে পারে নাই বাংলাদেশ বির্নিমানের জন্য। আপনারা তাদের রক্তের সাথে গাদদারী কইরেন না। তাদের যে রক্ত-ত্যাগ, পরিবার ছাড়া, ঘর ছাড়া, ব্যবসা ছাড়া, জীবন দিয়েছে, ইলিয়াস আলীরা গুম হয়েছে; তারা কখনোই আর ফিরবে না। সুমন ভাইয়ের মা আর কখনোই তাকে ফিরে পাবে না। এছাড়া অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছে, তাদের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যে আকঙ্খা, তার প্রতি সম্মান জানিয়ে চলেন আমরা বাংলাদেশটাকে বিনির্মান করি। আমাদের রাজনৈতিক মতপার্থকে উর্ধ্বে রেখে বাংলাদেশ প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি।
দক্ষিণাঞ্চলের এ মূখ্য সংগঠক আরো বলেন নির্বাচন অবশ্যই ফেব্রুয়ারীতে হওয়া উচিত, অবশ্যই হতে হবে। নির্বাচনকে তারাই পিছিয়ে দিতে চায়, তারা এই সরকারের সাথে জুলাই সনদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে চায়। সংস্কার প্রক্রিয়া যথাসময়ে সম্পন্ন করে ফেব্রুয়ারীতে অব্যশই নির্বাচন হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে কেউ কেউ বলছে জুলাই সনদ প্রয়োজন নেই। তারাই আবার বলতে পারে ২৪’র অভ্যুত্থান এই নির্বাচনের জন্যই হয়েছে। এইগুলো আপনারা ভোলার যেই কার্যক্রম হয়েছে তার মধ্য দিয়েই আপনারা তার বহিঃপ্রকাশ দেখেছেন। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত লড়াই করেছেন আন্দালিব রহমান পার্থ। ওনার দলের উপর, নেতা-কর্মীদের উপর যে হামলা চালানো হয়েছে তার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আসলে রাজনীতি কোনদিকে যাচ্ছে, পেশি শক্তি কোন দিকে যাচ্ছে, গতকাল তার একটা নমুনা হয়ে গেছে। তাই আন্দালিব রহমান পার্থ সাহেবকে বলতে চাই- দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদ লড়াইয়ে ওনারা যোদ্ধা। ওনাদের প্রতি আমাদের সম্মান আছে, আমরা ওনাদের ত্যাগকে সম্মান জানাই। একই সাথে সাথে আমরা তাদের আহ্বান জানাবো-আমাদের মনে হয়েছে ২৪’র পরবর্তীতে ওনারা একটু ট্রাকলেছ হয়ে গেছেন। এখনও সুযোগ ও সময় আছে ফিরে আসার। কালকের ঘটনা থেকে যদি ওনারা শিক্ষা নিয়ে ফিরে আসতে পারেন, তা হলে ওনাদেরকে জনগণ আবারো কাছে টেনে নিবে।
তিনি আরো বলেন, ওনারা যেভাবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠ যারা রেখেছেন- তাদেরকেই যদি আবার এভাবে ভোলা থেকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করা হয় নির্যাতনের মধ্য দিয়ে, তা হলে আপনারা বুঝেন-যারা সুলাই সনদ চায়না, তারা আসলে বাংলাদেশটাকে কোন দিকে নিতে চায় ? তারা আসলে কিসের প্রস্তুতি নিচ্ছে ?
আমাদের সংগঠনের সামাজিক বিস্তার, সাংগঠনিক কাঠামোকে আরো সু-সংগঠিথত করার কার্যক্রম আমাদের দীর্ঘদিন যাবত দেশব্যাপী চলচে। সেই লক্ষেই আজকে ভোলা জেলায় সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমন্বয় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল বিভাগীয় সম্পাদক এডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন, দক্ষিণাঞ্চলীয় যুগ্ম-মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা আলম মিতু এবং এনসিপির কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীগণ। সভায় সভাপতিত্ব করেন ভোলা জেলা প্রধান সমন্বয়কারী মেহেদী হাসান শরীফ। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জেলা যুগ্ম সমন্বয়কারী মাকসুদুর রহমান প্রমুখ।