স্টাফ রিপোর্টার, ভোলা : ভোলার নতুন বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করায় পৌরসভার ৩টি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল ৫ টায় এ ঘটনা ঘটে। উচ্ছেদ অভিযানকালে হকার ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের লোকজনের সাথে পৌর কর্মচারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে পৌরসভার অন্তত ১৫ কর্মচারী আহত হন।
পৌরসভার স্যানেটারী ইন্সপেক্টর মো: ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে জানান, নতুন বাজার এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও হকাররা পৌরসভার জায়গা দখল করে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধ স্থাপনা বানিয়ে ব্যবসা করে আসছিল। বার বার নোটিশ করা সত্ত্বেও তারা এসব স্থাপনা সরাননি। অবশেষে নোটিশের সর্বশেষ তারিখের বেশ কয়েকদিন পর আজ ওইসব স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়া হয়। এতে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে হকারসহ একদল দুর্বৃত্ত পৌরসভার ৩টি ময়লা বহনকারী পিকআপভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় পৌর কর্মচারীদের সাথে ওইসব দখলবাজদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বাঁধে। প্রায় পৌনে ১ ঘন্টাব্যাপী পৌরভ্যানে আগুন জ্বলছিল। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে হকারদের নিয়ে পৌরসভার গাড়িতে আগুন দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন পৌর সভার লোকজন দোকান-পাট উচ্ছেদ অভিযান চালায় তখন আমি বাসায় ছিলাম। খবর পেয়ে ভোলায় এসে দেখি পৌর কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। তৎক্ষনিকভাবে আমি ও একজন মুক্তিযোদ্ধা সহকারে বিষয়টি নিয়ে তখন জেলা প্রশাসকের কাছে যাই। জেলা প্রশাসককে নিয়ে যখন ঘটনাস্থলে আসি, তখন দেখি ৩টি গাড়িতে আগুন জ্বলছে। কে বা কারা দিয়েছে আমি তা জানি না। আমি তো জেলা প্রশাসকের কাছেই ছিলাম, তা হলে আমি কিভাবে গাড়িতে আগুন দিলাম ?
তিনি আরো বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে দেশের সম্পদ নষ্ট করবো, তা কখনোই সম্ভব না। আমার নামে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমাদের বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা সংসদের যে আহ্বায়ক কমিটি আছে ওই কমিটিতে ঢোকার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এবং আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতে এ মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে।
পৌর প্রশাসক মো: মিজানুর রহমান জানান, এসকল দখলবাজরা দীর্ঘবছর ধরে পৌরসভার জায়গা দখলে নিয়ে নিজেদের ব্যবসায়িক কেন্দ্র খুলে বসেছে। ফলে কর্তৃপক্ষ পৌরবাসীর স্বার্থে এবং শহরে যানজট নিরসন করতে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে বাধ্য হয়েছেন। ইতিমধ্যে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে এ ঘটনার পর পরই জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রাইসুল আলম খবর পেয়ে সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নেভাতে সহায়তা করেন। তিনি বলেন আজকের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। যা মেনে নেয়ার মত নয়। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এর সঠিক বিচার দাবী করেন তিনি। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর ইনকিলাবকে জানান আজকের ঘটনা আমি শুনেছি। সরকারি সম্পত্তি নস্ট করা খুবই অন্যায় কাজ।আমি এ ঘটনার নিন্দা ও সঠিক বিচার দাবী করছি। পুলিশ সুপার মো: শরীফুল হক গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান ইনকিলাবকে জানান ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। পৌরসভা তাদের দাবী করে উচ্ছেদ করেছে। সঠিকভাবে বিষয়টি নিয়ে জেনে পরবর্তীতে জানানো হবে।