‎গাংনীতে সার সংকট, কালোবাজারে বিক্রির অপরাধে ব্যবসায়ীর জরিমানা

মেহেরপুর প্রতিনিধি: গাংনীতে সার সংকট কালোবাজারে সার বিক্রয়ের অপরাধে সার ব্যবসায়ী মাহাবুবকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাঁশবাড়িয়া বাজারে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন।

‎ভ্রাম্যমান আদালত সূত্রে জানা গেছে, গোপনে গাংনী উপজেলার সার কালোবাজারি হয়ে মেহেরপুরে, কুষ্টিয়া মহাসড়কের বাঁশবাড়িয়া হয়ে মেহেরপুরের দিকে যাচ্ছিল। পথের মধ্যে থেকে জনতা হাতে নাতে আটক করে, পরে স্থানীয় জনগণ উপজেলা প্রশাসনকে খবর দেয়।

‎খবর পেয়ে গাংনী উপজেলা প্রশাসন সার গুলো জব্দ করে এবং বাঁশবাড়ীয়া বাজারের সার ব্যবসায়ী মাহাবুবকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করে।

‎এব্যাপারে সার ব্যবসায়ী মাহাবুব জানান, ধানখোলা ইউনিয়নের সার ব্যবসায়ী বিসিআইসি ডিলার এনামুল হকের নিকট থেকে সার ক্রয় করেছি প্রতি বস্তা দুই শত থেকে আড়াইশত টাকা বেশি দিয়ে ক্রয় করেছি।

‎গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের বিএনপি নেতা নুর ইসলাম জানান, ধানখোলা ইউনিয়নের বিসিআইসির সার ডিলার এনামুল হক দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বরাদ্দকৃত সার গোপনে অতিরিক্ত গামে বাহিরে বিক্রয় করে আসছেন।

‎প্রকৃত কৃষকদের মাঝে সার না দিয়ে তিনি কয়েকজন বিএনপি নেতার সহযোগিতায় নাম মাত্র সার দিয়ে বরাদ্দকৃত সার অতিরিক্ত দামে বাহিরে বিক্রয় করে ইউনিয়নে সারের সংকট তৈরি করছে। অবিলম্বে এইসব ডিলারদের লাইসেন্স বাতিল করে, নতুন ভাবে ডিলার নিয়োগের অনুরোধ করেন।

‎সম্প্রতি কয়েকদিন আগে ধানখোলা ইউনিয়নের শত শত চাষী খানখোলা ইউনিয়নের বিসিআইসি ডিলার এনামুলের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করেছেন বঞ্চিত কৃষকরা। ২৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের জুগিন্দা বাজারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

‎মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ধানখোলা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম, শফিউর রহমান ট্রমা, শহিদুল ইসলাম, লিটিল হোসেন, জেলা যুবদলের সদস্য ফারুক হোসেন ও কৃষক রাজন হোসেন মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ধানখোলা ইউনিয়নে নিয়োগপ্রাপ্ত দুই জন্য বিসিআইসি সার ডিলার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নন। ফলে কৃষকরা ন্যায্য হারে সার না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন।

‎কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় বাসিন্দাদের ডিলারশীপ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ধানখোলা ইউনিয়নে এ নিয়ম মানা হয়নি। বর্তমানে ইউনিয়নে বিসিআইসির দুটি ডিলারশীপ দেওয়া হয়েছে- মেসার্স এন আর এন্টারপ্রাইজ যার মালিক এনামুল হক, যিনি গাংনীর বাসিন্দা এবং গাংনী বাজারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মেসার্স কাদের স্টোর যার মালিক হারুন অর রশিদ, তিনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গাংনী বাজারে অবস্থিত।

‎বক্তারা বলেন, এরা কেউই ধানখোলা ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা নন। কৃষকদের সাথে তাদের কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই এবং তাদের সার সরবরাহ কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। কৃষকরা সঠিক সময়ে সার পাচ্ছেন না, অনেক সময় অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সার ক্রয় করতে হচ্ছে।

‎বক্তারা আরও বলেন, তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ডিলারশিপ নিয়েছেন। মেসার্স কাদের স্টোরের স্বত্বাধিকারী হারুন অর রশিদ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেকের আপন ভাই এবং এন আর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এনামুল হক আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত।

‎এছাড়াও এনামুলের পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে ডিলারশীপ রয়েছে।

‎তারা স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সরকারি মূল্যে সার বিক্রি না করে খুচরা বাজারে অধিক দামে বিক্রি করেন, কৃষকরা তাদের কাছে সার আনতে গেলে সার না দিয়ে অসাদাচারণ করে হয়রানি করে।

‎আওয়ামী লীগের সার ডিলারশীপ বাতিলের দাবি জানানো হয় মানববন্ধনে দাবী করা হয়েছে, সরকারি বরাদ্দকৃত সার প্রকৃত কৃষকদের মাঝে না বিক্রয় করে অতিরিক্ত দামে ব্যবসায়ীদের কাছে গোপনে বিক্রয় করছেন বিসিআইসি ডিলাররা। এর ফলে সারের সংকট তৈরি হচ্ছে অবিলম্বে আওয়ামীলীগ অনুগত ডিলার বাতিলের দাবি করেছেন।

‎কৃষকরা জানিয়েছেন, সার নিয়ে এ ধরনের অনিয়ম চলতে থাকলে ধানখোলা ইউনিয়নের কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

‎এব্যাপারে বিসিআইসি ডিলার এনামুল হক জানান, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে আমি মাহবুবের কাছে কোন সার বিক্রয় করিনি,আওয়ামীলীগ সরকার আমলে কত বরাদ্দ ছিল, আর আওয়ামীলীগ পতনের পর কত বরাদ্দ পেয়েছেন এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর কোন উত্তর দিতে পারেননি।

‎অতিরিক্ত দামে বাহিরে সার বিক্রয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান, অতিরিক্ত দামে ডিলাররা সার বিক্রয় করছে না আমরা মনিটরিং করছি, যদি কোন ডিলার অতিরিক্ত দামে বাহিরে বিক্রয় করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।

‎অতিরিক্ত দামে সার বিক্রয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, আমি ইতি মধ্যেই গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসারকে মনিটরিং করার জন্য বলেছি, কোন বিসিআইসি ডিলার গোপনে অতিরিক্ত দামে বাহিরে সার বিক্রয় করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

‎কালোবাজারে সার বিক্রয়ের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে একজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর