জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে টিসিভি ভ্যাকসিনেসন ক্যাম্পেইন ২০২৫ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

১২ অক্টোবর থেকে সারাদেশে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু

নয় থেকে ১৫ বছরের ৫ কোটি শিশুকে টাইফয়েড টিকা দিবে সরকার

এ আর এম মামুন।।

সারা দেশে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন। চলবে ১৮ কর্মদিবস। নয় মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু এবং পাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি/সমমান পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে ১ ডোজ টাইফয়েডের টিকা দেয়া হবে।

সরকার ৫ কোটি শিশুকে এই টিকা দেয়ার টার্গেট নিয়েছে। ইতিমধ্যে ১ কোটি ৫৮ লাখ শিশু টিকা নিতে নাম নিবন্ধন করেছে। নিবন্ধিত শিশু ক্যাম্প চলাকালীন দেশের যে কোনো ক্যাম্প থেকে টিকা দিতে পারবে। অনিবন্ধিত শিশুদের বিকল্প ব্যবস্থায় টিকা নিশ্চিত করা হবে। দুর্গম এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বা ভাসমান জনগোষ্ঠীর শিশুদের এ টিকা নিশ্চিত করা হবে। এ কার্যক্রমের বাইরে থাকবে না কোন শিশু।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন “শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম” প্রকল্পের আওতায় সোমবার ৬ অক্টোবর জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা জোরদার করতে টিসিভি ভ্যাকসিনেসন ক্যাম্পেইন ২০২৫ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত কর্মশালায় আয়োজকরা এসব তথ্য জানান।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ হিরুজ্জামান। প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলতাফ-উল-আলম।

রিসোর্স পারসন ছিলেন, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান), ড. মো. মারুফ নাওয়াজ, ইউনিসেফের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সলোমান, ইপিআই ফোকাল পয়েন্ট ডা. রাজীব সরকার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. মো. শাহরিয়ার সাজ্জাদ। ইউনিসেফের টিকাদান কর্মসূচির ব্যবস্থাপক ডা. রিয়াদ মাহমুদ, ইউনিসেফের এসবিসি সেকশনের শেখ মাসুদুর রহমান, প্রমূখ।

কর্মশালায় জানানো হয়, টাইফয়েড প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত টিসিভি টিকা নিরাপদ ও কার্যকর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানবহির্ভূত শিশুদের ইপিআই কেন্দ্র থেকে টিকা দেওয়া হবে। দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ঊরুর মাংসপেশিতে এবং দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুদের বাহুর উপরিভাগে ০.৫ এম. এল. (মিলিলিটার) ইনজেকশন দেওয়া হবে। বাংলাদেশে নয় মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরাই টাইফয়েডে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে। তাই এই বয়সী শিশুদের এক ডোজ টিকা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।

কর্মশালায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলতাফ-উল-আলম প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অনস্বীকার্য। বিশেষ করে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় টিসিভি টিকাদান কর্মসূচি একটি সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। গণমাধ্যমের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা জনগণের সর্বস্তরে পৌঁছানো সম্ভব নয়। ইউনিসেফ বাংলাদেশ এই কার্যক্রমে যে কারিগরি ও কৌশলগত সহায়তা প্রদান করছে।

জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহম্মদ হিরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পোলিও, কলেরা ও অন্যান্য সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে যে সাফল্য অর্জন করেছে, তার পেছনে গণমাধ্যমের অগ্রণী ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমি বিশ্বাস করি, টিসিভি টিকাদান কর্মসূচিও গণমাধ্যমের শক্তিশালী অংশগ্রহণ ও দায়িত্বশীল প্রচারণার মাধ্যমে একটি সফল জাতীয় উদ্যোগে পরিণত হবে।

তিনি সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান, এই টিকাদান কার্যক্রমের গুরুত্ব ও বার্তাটি আরও বেশি প্রচারের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে, যাতে সবাই টিসিভি টিকাদানের সুফল সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন।

আয়োজকদের মতে, কোনো শিশু বা ভাসমান জনগোষ্ঠী যেন টিকাদানের বাইরে না থাকে, সে বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। সচেতনতা বাড়লে শিশু-কিশোরদের মধ্যে টাইফয়েড সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।

কর্মশালায় আরও জানানো হয়, বেদে সম্প্রদায়সহ দেশের কোনো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও এই কার্যক্রমের বাইরে থাকবে না।

আয়োজকেরা আশা করেন, গণমাধ্যমের সহযোগিতায় সচেতনতা ছড়িয়ে পড়লে শিশু-কিশোরদের মধ্যে টাইফয়েড সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

এ আয়োজনের মাধ্যমে টিসিভি টিকা সংক্রান্ত তথ্য, বার্তা ও জনস্বাস্থ্যগত গুরুত্ব সাধারণ জনগণের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমকে আরও কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।

কর্মশালায়  প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার ৭০ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।

অংশগ্রহণকারীরা টিসিভি টিকার কার্যকারিতা, নিরাপত্তা, টিকাদানের সময়সূচি, লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠী এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যকর কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করেন।

এই বিভাগের আরো খবর