প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে আজিমপুরের প্রয়াত বাউল শিল্পী রশিদ সরকারের ফকির মাওলা দরবার শরীফের বাৎসরিক ওরশ ‘সাধুর মেলা’ আয়োজন করাকে কেদ্র করে স্থানীয়দের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্যেও শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ওরশের আয়োজন করে সাধুর মেলা কর্তৃপক্ষ। ঐ দিন বেলা ১১টার দিকে স্থানীয়রা এতে বাঁধা দিলে রশিদ সরকারের ভক্তরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোঠা নিয়ে স্থানীয়দের ওপর হামলা চালায়। স্থানীয়রাও পরিস্থিতি মোকাবেলায় রুখে দাঁড়ালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। পরে সিংগাইর থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
ঐ ঘটনায় রশিদ সরকারের স্ত্রী শিরিন আক্তার (৭০), তার ছেলে সাবেক পৌর মেয়র আবু নইম মোহাম্মদ বাশারের স্ত্রী শাহানারা আক্তার (৩৮), ফকির মাওলা দরবার শরীফের খাদেম ও ভক্তবৃন্দসহ মোট ৯জনকে আটক করে সিংগাইর থানা পুলিশ। বাকিরা হলেন, চর আজিমপুরের ওখিল উদ্দিন (৫৬), আংগারিয়ার শাহানুর ইসলাম (৪১), কাংশার মো. সাইদুর (৩৫)দোহার থানার আমির হোসেন (৫৩), ধামরাই থানার লুৎফর রহমান (৪৬), আশুলিয়া থানার শাজাহান (৫৮), বরিশালের রাজাপুরের বিল্লাল হোসেন (৬৬)। পরে রাত ৯টার দিকে তারা মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।
বাউল সম্রাট প্রয়াত রশিদ সরকার মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি ও সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ বেগমের প্রথম স্বামী। এছাড়া তিনি নিজেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। রশিদ সরকারের ছেলে সাবেক পৌর মেয়র আবু নইম মোহাম্মদ বাশার নিজেও সিংগাইর আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা। ৫ আগষ্টের পর তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।
দরবারের কয়েকজন ভক্ত বলেন, মিঠু চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গোবিন্দলসহ স্থানীয় লোকজন তাদের ওপর চড়াও হন।
স্থানীয়রা জানান, সাধুর মেলায় প্রকাশ্য রশিদ সরকারের ভক্তরা মাদক সেবন করে। যা থেকে আসক্ত হয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এলাকার যুব সমাজ। রশিদ সরকার ও তার ছেলে এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের কেউ বাধা দিতে পারত না। রশিদ সরকার মারা যাবার পর তার ছেলে পৌর মেয়র বাশার সাধুর মেলা পরিচালনা করে আসছিলেন। ৫ আগষ্টের পর তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।
স্থানীয় কয়েকজন আরো জানান, আমরা জানতে পেরেছি সাধুর মেলার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা ভেবে পুলিশ মেলা করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, মেলার বা ওরশ না করতে বার বার পুলিশ পাঠিয়েছেন। এত নিষেধাজ্ঞার পরেও তারা শক্রবার মেলার আয়োজন করে ছিলেন। তাই সেখানে অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে গোবিন্দলসহ আসেপাশের এলাকাবাসী জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু দরবারের লোকজন মনে হয় আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।
সিংগাইর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান মাহবুবুর রহমান মিঠু বলেন, সাধুর মেলায় প্রকাশ্য মাদক সেবন করা হয়, গাঞ্জার আসর বসানো হয়। এতে যুব সমাজ নষ্ট হয়। এমন অনৈতিক কার্যকলাপ তো চলতে দেয়া যায়না। তাই খুঁজ নিতে সেখানে যাই, সাথে স্থানীয় সচেতন এলাকাবাসী ছিল। আমাদের দেখেই ফকির মাওলা দরবার শরীফের লোকজন হামলা করতে আসে।
শক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার ইয়াসমিন খাতুনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জাহিদুল ইসলাম বলেন, মেলা বা ওরশ করার তাদের কোন অনুমতি ছিলনা। শুক্রবার ফকির মওলা দরবার শরীফে সাধুর মেলাকে কেন্দ্র করে দরবারের ভক্ত ও স্থানীয়দের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে মেলা কর্তৃপক্ষের ৯জনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। পরে মুসলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।