আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম :
দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে কুড়িগ্রাম জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে বাংলাদেশ রেলওয়ের রেললাইন এর পাশে রেলওয়ের জায়গায় আওয়ামী লীগ তার কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয় স্থাপন করে তাদের জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এক সময় জায়গাটিতে আধা পাকা বিল্ডিং থাকলেও পরবর্তীতে ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের নেতারা দ্বিতল বিল্ডিং বানিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম করে আসছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়টি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতারা। এতো দিন পরিত্যক্ত থাকার পর সারাদেশের ন্যায় পূণরায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি পুরোপুরি গুড়িয়ে দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতারা।
কুড়িগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের গুঁড়িয়ে দেওয়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অবৈধ দখলদাররা দোকান নির্মাণের পাঁয়তারা শুরু করেছে। সচেতন সাধারণ মানুষ বিষয়টি প্রশাসনের নজরে দেয়ার চেষ্টা করেছে।
কুড়িগ্রাম শাপলা চত্বর এলাকার বাসিন্দা মোঃ আবু মুসা জানান, আমার বোধশক্তি হবার ৪০ বছর ধরে রেল লাইন এর পাশে এবং রেল ক্রসিং এর জায়গায় আওয়ামী লীগ তাদের পার্টি অফিস করেছিল। এই জন্য এখানে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় পার্টি অফিস সরানোর দাবি জানালেও কোন সরকার তা আমলে নেয়নি। এখন যেহেতু জায়গাটি অবমুক্ত হয়েছে, সেহেতু এই জায়গাটি রাস্তায় সংযুক্ত করে রাস্তা আরো প্রশস্থ করা দরকার। কিন্তু প্রশাসনের কাউকে এই বিষয়ে কোন প্রকার পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। পুনরায় জায়গাটি আওয়ামী লীগ দোসরদের দখলে চলে যাচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা শহরের ঘোষপাড়া শাপলা চত্বরে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেখানে দোকানঘর নির্মাণ শুরু হয়েছে। ওই জমির অবৈধ ইজারাদার ব্যক্তির পরিবারের তত্ত্বাবধানে সেখানে দোকান নির্মাণ করতে দেখা গেছে।
গত বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও বিক্ষুব্ধ জনতা এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। এর আগে গত ৪ আগস্ট বিকেলে প্রথম দফায় কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন ছাত্র-জনতা। এর পর থেকে আওয়ামী লীগের এই কার্যালয় পরিত্যক্ত ছিল।
কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, তাদের জেলা কার্যালয়ের জায়গাটি মূলত রেলের সম্পত্তি। তবে ইজারাদার হিসেবে জায়গাটি শহরের পাওয়ার হাউস পাড়া এলাকার বাসিন্দা নছিয়ত উল্লাহ নামের এক ব্যক্তির নামে রয়েছে। তাঁর কাছ থেকে দুই দশকের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ মাসিক ভাড়ায় জায়গাটি ব্যবহার করে আসছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিনবারের শাসনামলের প্রথম দিকে কার্যালয়টির দুই তলা পাকা ভবন করা হয়।
সোমবার বিকেলে শহরের ঘোষপাড়া শাপলা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, ইজারাসূত্রে ওই জমির মালিক পরিবারের সদস্য দাবি করা মো. তাজুল ইসলাম শ্রমিক দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া ভবনের ইট সরিয়ে নিচ্ছেন।
পাশেই কয়েকজন শ্রমিক টিনের বেড়া দিয়ে জায়গাটি ঘিরে রাখছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে কাজের তদারকি করছেন কুড়িগ্রাম পৌর শহরের পাওয়ার হাউস এলাকার বাসিন্দা মো. তাজুল ইসলাম।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ৫০ বছর আগে আমার বাবা মরহুম নছিয়ত উল্লাহ ব্যাপারী এই জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়েছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা দুই ভাই এই জমির লিজসূত্রে মালিক। এখানে ২০ বছর আগে আওয়ামী লীগের নেতারা আমাদের কাছ থেকে জায়গাটি ভাড়া নিয়ে তাঁদের অফিস করেছিলেন। এরপর তিন দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে দুই তলা একটা ভবন করেন। ভবনটি ভেঙে দেওয়ার পর এখন ঘিরে রাখতেছি। এই জায়গায় দোকানঘর করার পরিকল্পনা রয়েছে। লিজের সময় শেষ হলে সরকারকে জায়গাটা বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’