সময়ের চিত্র ডেস্ক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন না হয়, সেজন্য অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ছিল। জনগণ যেন ভোট বর্জন করে সেই চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু জনগণ সব বাধা উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে এবং আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে জনসভায় এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। দারিদ্রের হার কমেছে, মানুষের আয় বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি, মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি, সাক্ষরতার হার বেড়েছে। সবদিক থেকে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সারাবিশ্ব যখন বলে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল, তখন আমাদের দেশে কিছু আছে দালাল শ্রেণি আর কিছু বাহিরের লোক, তাদের চোখে কিছুই ভালো লাগে না। মনে হয় যেন, একটি অগণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় এলেই তারা খুশি।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে নির্বাচন যেন না হয়, সেজন্য একটি চক্রান্ত ছিল। হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ পুড়িয়ে মারা, অ্যাম্বুল্যান্সে হামলা করা, পুলিশকে ফেলে পিটিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করার দৃশ্য মানুষ দেখেছে। ট্রেনে আগুন দিয়ে মা ও শিশুকে পুড়িয়ে মারা মানুষ দেখেছে। জনগণ যাতে নির্বাচনে ভোট না দেয়, সেজন্য লিফলেট বিলি করে তাদের ভোট থেকে বিরত রাখার চেষ্টাও তারা (বিএনপি) করেছে। আমরা কিন্তু বাধা দেইনি। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সব বাধা উপেক্ষা করে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে এবং ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগকে। এই নির্বাচনকে তারা গ্রহণ করেছে। সেজন্য আমি জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, জাতির ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের কোনো কিছু ছিল না। থাকার ঘর ছিল না, বাড়ি ছিল না, শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল এ দেশের মানুষ। সেই জাতির জন্য, তাদের ভাগ্য গড়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। অনেক সংগ্রাম ত্যাগের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেন।
তিনি বলেন, পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ফিরে এসেছিলেন এই বাংলাদেশে। সবার আগে ছুটে এসেছিলেন এই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। যেখানে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার জীবনটা উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের জনগণের জন্য। এ দেশে অন্ন, বস্ত্র ,বাসস্থান, শিক্ষার কোনো কিছু ছিল না। প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষই দারিদ্র্য সীমার নিচের বাস করত। একবেলা খাবার পেত না, দিনের পর দিন না খেয়ে তাদের জীবন কাটাতে হয়েছে। সেই মানুষদের মুক্তির জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেতে হয়েছিল তাকে।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের জনসভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ফাইনাল হয়ে গেছে ৭ জানুয়ারি। কী হলো? বিএনপি একটা ভুয়া দল। তাদের আন্দোলন ভুয়া। তাদের কর্মসূচি ভুয়া। তাদের ২৮ দফা ভুয়া। এক দফা ভুয়া। তাদের আরাফি বাইডেনের উপদেষ্টা ভুয়া। বিএনপিও ভুয়া। তাদের নেতা তারেক আসল ভুয়া। তার ডাক লন্ডন থেকে কেউ শোনে না। তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভুয়া।
তিনি বলেন, নির্বাচনের খেলা শেষ, এখন নতুন খেলা। এখন খেলা হবে রাজনীতির। এখন খেলা হবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। খেলা হবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। খেলা হবে দুর্নীতি ও লুটপাটের বিরুদ্ধে। খেলা হবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।
এর আগে সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে উদ্যানের চারদিকে জড়ো হন ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা। দুপুর দেড়টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিভিন্ন প্রবেশ গেট দিয়ে নেতাকর্মীরা প্রবেশ করতে শুরু করে। পরে শেখ হাসিনা সমাবেশ মঞ্চে উঠলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা পতাকা নেড়ে তাকে স্বাগত জানান। মঞ্চে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।