২০ ঘণ্টা পর তুলার গুদামের আগুন নিয়ন্ত্রণে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।। চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরা এলাকায় ইউনিটেক্স গ্রুপের তুলার গুদামে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। প্রায় ২০ ঘণ্টা পর রোববার ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘সবার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন ধোঁয়া আছে শুধু, আমরা পানি ছিটাচ্ছি এখনও। আশা করি কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরোপুরি নির্বাপন হয়ে যাবে।

রাতভর যৌথ বাহিনীর ২২ টি ইউনিট নির্বাপণে কাজ করে। ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্য, পানি সংকট ও তুলা দাহ্য পদার্থ হওয়ায় নিয়ন্ত্রণে সময় লেগেছে।

কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ চৌধুরী জানান, এই গুদামে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ওয়েল্ডিয়ের কাজ চলছিল। ধারণা করা হচ্ছে কাজের সময় সৃষ্ট স্ফূলিঙ্গ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ইউনিটেক্স গ্রুপের তুলার গুদামে লাগা ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী।

শনিবার সকাল ১০টার দিকে ওই গোডাউনটিতে আগুন লেগে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট বেশ কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা করলেও আগুন না নিয়ন্ত্রণে আসায় তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় সেনাবাহিনী। পরবর্তী যোগ দেয় নৌবাহিনী। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকেও রিপোর্ট করা হয়েছে। এই বাহিনীর ইউনিটও যোগ দিচ্ছে আগুন নির্বাপন কাজে।

বর্তমানে মোট ১৫টি ইউনিট আগুন নির্বাপনে কাজ করছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর ৫টি ও নৌবাহিনীর দুটি ইউনিট রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের (এনডিসি) নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আগুন নিয়ন্ত্রণে তিনি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর কাছে সাহায্য চাওয়ায় এই তিন বাহিনী যুক্ত হয়েছে।

ওই গুদামে ২ হাজার ৭০০ টন তুলা ছিল। এসব দাহ্য পদার্থ হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হচ্ছে।

আগুন লাগার পর থেকেই পানি সংকটের কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। শুরুতে আশপাশের জলাশয় থেকে পানি সংগ্রহ করা হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তা শুকিয়ে যায়। পরবর্তীতে নিকটস্থ কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে পানি আনা হয় কয়েকবার, ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী ন্যামসন কন্টেইনার ডিপোর রিজার্ভার থেকেও পানি সংগ্রহ করা হয়।

ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, ‘সকাল ১০ টা ২৫ এর দিকে আমরা আগুন লাগার খবর পাই। তৎক্ষণাৎ আমাদের কুমিরা ও সীতাকুণ্ড স্টেশনের ৪ টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরবর্তী আগ্রাবাদ স্টেশন থেকেও তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। এরমধ্যে কুমিরা ও সীতাকুণ্ড স্টেশন থেকে আরও একটি একটি করে ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যুক্ত হয়।’

আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমত আমাদের পানির সংকট। তাছাড়া এটা তুলার আগুন। তুলার আগুন নিয়ন্ত্রণে এমনিতেই দেরি হয়। আর পানির যোগান পেতে সমস্যা হচ্ছে। আশপাশে খুব বেশি জলাশয় নেই, যা ছিল শুকিয়ে গেছে। আমরা এখন পার্শ্ববর্তী ন্যামসন কন্টেইনার ডিপোর রিজার্ভার থেকে পানি সংগ্রহ করছি৷’

এদিকে সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। রাত নয়টার দিকে তিনি বলেন, ‘আগুনের ভয়াবহতা দেখে আমরা সামরিক বাহিনীর সাহায্য চেয়েছি। এরমধ্যে সেনাবাহিনী সদস্যরা ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীও কিছুক্ষণের মধ্যে যুক্ত হবে।’

কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই গুদামে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, কাজের সময় সৃষ্ট স্ফুলিঙ্গ থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।

আগুনে কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাইদ।

তদন্ত কমিটি গঠন

আগুনের ঘটনা তদন্তে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বদিউল আলমকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। রাত সাড়ে ৯টায় তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন এনডিসি মো. তৌহিদুল ইসলাম।

তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কমিটিতে জেলা পুলিশ সুপারের একজন প্রতিনিধি, শিল্প পুলিশ সুপারের একজন প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ডিআইজি, সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সীতাকুণ্ড থানার ওসি, বিটিএমসির প্রতিনিধি, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রতিনিধি এবং বিটিএমইএ’র একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। কমিটিকে ৫ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর