দেশ

১৩ দিনেও সন্ধ্যান মেলেনি মাদ্রাসা শিক্ষকের

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে শিক্ষককে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

ভোলা প্রতিনিধি।। ভোলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নেওয়ার ১৩ দিনেও সন্ধান মেলেনি মাওলানা মোহাম্মাদ মহিবুল্লাহ নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের। তিনি ভোলা সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের চর ছিফলী গ্রামের মৃত আবদুর রব ছেলে এবং ওই গ্রামের বায়তুল আমান হোসাইয়নিয়া জামে মাসজিদে ইমাম ও ভোলার চরনোয়াবাদস্থ ‘আনাস বিন আবদুল মালেক ইসলামী কমপ্লেক্স’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরবি শিক্ষক। রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিখোঁজ মাওলানা মোহাম্মাদ মহিবুল্লাহর শ্বশুড় মাওলানা আবদুস সহিদ বলেন, গত ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর পৌনে ১ টার দিকে তার মেয়ে জামাই মাদ্রাসা শিক্ষক মহিবুল্লাহ ওই মাদ্রাসার ক্লাস নিচ্ছেন। ওই সময় সিভিল পোশাকে কয়েকজন লোক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তাকে মাদ্রাসার ক্লাস রুম থেকে বের করে নিয়ে যায়।পরে তার বাড়িতে তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়েতল্লাশী চালায়। তার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি আরও জানান,ঘটনার পরই আমরা ভোলা সদর থানায় খোঁজ নিলে থানার পুলিশ এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। একই ভাবে ডিভি অফিসে খোঁজ নিলে ডিবি ওসি এনায়েত হোসেন জানান, ঢাকা থেকে একটি টীম এসেছে তারা মাওলানা মোহাম্মদ মহিবুল্লাহকে আনতে গেছেন। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করেছি। এর বাহিরে আমরা আর কিছু জানি না। এরপরও আমরা একাধিকবার ভোলা থানায় ও ডিবি অফিসে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে তারা গত ১২ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজের সন্ধানের জন্য ভোলা মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছেন যার জিডি নং-৬৬৫। র্দীঘ ১৩ দিন ধরে নিখোঁজ শিক্ষকের সন্ধান না পেয়ে তার স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়স্বজনরা দুচিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। তাই দ্রুত মাদ্রাসার শিক্ষকের সন্ধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
মোহাম্মাদ মহিবুল্লাহ এর স্ত্রী  আমেনা বেগম বলেন, আমার স্বামী মাদ্রাসায় গিয়ে আজ ১৩ দিন ধরে বাসায় ফিরেনি। সে কোন রাষ্ট্র বিরোধী কোন কার্যক্রমে জড়িত ছিলোনা। সে একজন নিষ্পাপ শিশুর মতো ছিলো। তার জন্য পরিবার থেকে শুরু করে সবাই কান্নাকাটি করছে। কে বা কারা নিছে তাও জানিনা। তারা আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে বাসায় আসছে। কিন্তু কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক ছিলোনা। তারা কি পুলিশ না অন্য লোক তাও জানিনা। একটা পোশাক পরে গেছে এখন পর্যন্ত কোন খোজঁ খবর নেই। আমার সংসর হাল দরার মতো কেউ নাই। আমার শাশুড়ী অসুস্থ হয়ে গেছে ছেলের চিন্তায়। আমার ছোট্র ছেলেডারে এহন কে পড়ালেখা করাইবো তাও জানিনা। আমার স্বামী জীবিত আছে না ভালো আছে তাও জানিান। আমি আমার স্বামীকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই।
 মহিবুল্লাহ ছোট মেয়ে ফাহমিদা বলেন, সেদিন আমার বাবা সকালে মাদ্রাসায় গিয়ে তারপরে আর বাসায় আসেনি। শুনছি মাদ্রাসা থেকে  সাদা পোশাকে কারা নাকি আমার আব্বুকে নিয়ে গেছে। তাদেরকে আমরা চিনিনা। এখন একটাই আবদার প্রশাসনের কাছে আমার আব্বুকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পেতে চাই। আমার আব্বু রাষ্ট্র বিরোধী কোন কাজকর্মের সাথে জড়িত ছিলোনা বলে দাবি করেন তার মেয়ে।
এসময় নিখোঁজ শিক্ষকের চাচা মো. বিল্লাল হোসেন ও তার ভাতিজা মো. রিয়াজসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।
 এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনাস বিন আবদুল মালেক ইসলামী কমপ্লেক্স প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, গত ৬ ফেব্রুয়ারী দুপুরে আমার প্রতিষ্ঠানে সিভিল পোশাকে ৮ জন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে আরবি শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মাদ মহিবুল্লাহকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। আমাদের দাবি মাওলানা মোহাম্মাদ মহিবুল্লাহ যদি রাষ্ট্র বিরোধী কোন কাজ করে থাকে তবে তাকে প্রকাশ্যে এনে আইন আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হোক। আর তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকলে তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি ।
এদিকে ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাহিন ফকির জানান, আনাস বিন আবদুল মালেক ইসলামী কমপ্লেক্সের শিক্ষক নিখোঁজের ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button