১যুগ পর গোবিন্দলে ৪ খুনের ঘটনায় থানায় মামলা
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:
২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটুক্তির প্রতিবাদে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার গোবিন্দল গ্রামে বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে নিরিহ গ্রামবাসীর উপরে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৪ জনকে হত্যা, শতাধিক হতাহতের ঘটনা প্রায় ১যুগ পর স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সিংগাইর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) শহীদ নাজিম উদ্দিনের পিতা মো: মজনু মিয়া বাদী হয়ে থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বলধারা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মাজেদ খান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান হান্নান, মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গায়িকা মমতাজ বেগম, সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান ওরফে ভিপি শহিদ, যুগ্ন সম্পাদক সায়েদুল ইসলাম, সাবেক পৌর মেয়র আবু নাঈম মো. বাশার, মীর মো. শাহজাহানকে আসামী করা হয়েছে।
মামলার বাকি আসামীরা হলেন, মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি ও মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাদক্ষ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু, পৌর কমিশনার আব্দুস সালাম, সমেজ উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রমেজ উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা তমিজ উদ্দিন, ফৈজুদ্দিন, রমজান আলী, ফয়েজ খান, জহির, সাইফুল, দেওয়ান জিন্নাহ লাঠুসহ ১০৯ জন। এছাড়া অজ্ঞাতনামা রয়েছে আরও ৬০০জন। তারা সকলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
মামলার এজাহার সূত্র জানা যায়, ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরের দিকে ইসলামী সমমনা দল সমূহের পূর্ব ঘোষিত সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন কালে গোবিন্দল নতুন বাজার চার রাস্তার মোড়ে হেমায়েতপুর টু মানিকগঞ্জগামী আঞ্চলিক মহাসড়কে হরতালের সমর্থনে শতশত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উপস্থিতিতে জনসমাবেশ জনস্রোতে পরিণত হইলে চরম ইসলাম বিদ্বেষী ও বিগত স্বৈরশাসক সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা তাদের উপর বিভিন্ন দেশী ও বিদেশী অস্ত্র দিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। পিস্তল ও রিভলবার দিয়ে সাধারণ মানুষের উপর গুলি বর্ষণ করে।
খুঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন গণজাগরণ মঞ্চ থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটুক্তি ও ইসলামবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে একই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার হেফাজতে ইসলাম ও সমমনা দল সমূহের পূর্ব ঘোষিত সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন কালে গোবিন্দল নতুন বাজারে হরতালের সমর্থনে শতশত ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি জনস্রোতে পরিণত হয়। সেখানে আগে থেকেই আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা বিদেশী রিভলবার, চাইনিস পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ পুলিশ বাহিনীর সাথে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী পুলিশের পোষাক পরিহিত অবস্থায় বিনা উস্কানিতে নিরহ গ্রামবাসীর উপর নির্বিচারে গুলি চালায়।
অই ঘটনায় গোবিন্দল গ্রামের মাওলানা নাসির উদ্দিন, আলমগীর হোসেন, নাজিম উদ্দীন ও শাহ আলম শহীদ হয়। আহত হয় আরো অর্ধশতাধিক। সে সময় আহত ও নিহতদের পরিবার সরকারি দলের দাপটে ও পুলিশের বাধায় মামলা দায়ের করতে পারেনি। থানায় মামলা করতে গেলে উল্টো মিথ্যা নাশকতার মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও আহত ব্যক্তিদের আত্মীয় স্বজনদের ধরপাকর করেছে পুলিশ।
ঘটনার প্রায় ১যুগ পর সিংগাইর থানার বর্তমান পুলিশ মামলাটি গ্রহন করলেও, ঘটনায় জড়িত তৎকালীন পুলিশের কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেন মামলা হলনা এই প্রশ্ন এখন সর্ব মহলের।