
তাসলিমা আক্তার মিতু, কিশোরগঞ্জ ।।কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার সাহেবেরচর গ্রামে চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্র রাতুল (২২) হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের নাম চার্জশীটে বাদ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। রোববার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে রাতুল হত্যায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা। জেলা শহরের গৌরাঙ্গবাজারে অনলাইন নিউজ পোর্টাল কিশোরগঞ্জ নিউজ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মামলার বাদী ও নিহত রাতুলের চাচা মো. শফিকুল ইসলাম, মা বিলকিস, তিন বোন বিথী আক্তার, স্মৃতি আক্তার ও লুবনা আক্তার, চাচা সাহিদ মিয়া, চাচি মোছা. মমতাজ বেগম, দাদা মো. নজরুল ইসলাম ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. কামরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন। তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, সাত বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে রাতুলের পিতা রফিকুল ইসলাম মারা যান। মা বিলকিস দর্জির কাজ করে তিন মেয়ে ও একমাত্র ছেলে রাতুলের ভরণপোষণসহ রাতুলকে লেখাপড়া করিয়ে এইচএসসি পাস করান। এরপর রাতুল গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেয়। এ রকম পরিস্থিতিতে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ছেলে রাতুলকে সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য মা বিলকিস ধারদেনা ও জমিজমা বিক্রি করেন। সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতুলের সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এর মাত্র ১০দিন আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে মারা যায় রাতুল। এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টার দিকে সাহেবেরচরে হযরত ছুলু শাহ (র.) এর মাজারে ওরশ দেখতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন অতর্কিতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রাতুলের উপর হামলা চালায়। হামলায় উপর্যুপরি কুপিয়ে তাকে ক্ষতবিক্ষত করা হলে মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সেখান থেকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় রাতুলের চাচা মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে একই গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ এর ছেলে মো. বকুল মিয়া (৪৫) কে প্রধান আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে হোসেনপুর থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। অন্যদিকে অবস্থার আরো অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় গত ৭ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাতুলের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর মামলায় ৩০২ ধারা সংযোজন করা হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, গত ২৭ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হোসেনপুর থানার এসআই মো. মিল্টন মিয়া আদালতে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার চার্জশীট দাখিল করেন। চার্জশীটে মামলার এজাহারনামীয় ১০ জন আসামির মধ্যে প্রধান আসামি মো. বকুল মিয়াসহ মোট ছয়জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতি পাওয়া অন্য পাঁচ আসামি হলেন, মো. কফিল মিয়া, মো. লিটন মিয়া, মো. মাসুদ মিয়া, মো. সিপন মিয়া ও আব্দুল জলিল। মামলার বাদী মো. শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, মো. বকুল মিয়া এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা। তাকেসহ মামলার গুরুত্বপূর্ণ ছয়জন আসামিকে চার্জশীটে বাদ দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অন্যায়ভাবে লাভবান হয়ে এই ছয়জন আসামির নাম বাদ দিয়েছেন। এতে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ মামলার পুনঃতদন্ত প্রয়োজন। তাই আদালতে আমরা এ চার্জশীটের বিরুদ্ধে নারাজি দিবো। সংবাদ সম্মেলনে ছেলে হত্যার সঠিক বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নিহত রাতুলের মা বিলকিস, চাচি মোছা. মমতাজ বেগম ও বড় বোন বিথী আক্তার। এ সময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মামলার বাদী মো. শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, এ মামলার আসামিদের মধ্যে তালিফ ছাড়া বাকি সবাই জামিনে রয়েছে। জামিনে এসে তারা মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য তাকে খুন-জখমের হুমকি দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তিনি গত ৩০ মে হোসেনপুর থানায় একটি জিডি করেছেন। এছাড়া মামলার আসামিদের মধ্যে অনেকেই ঘটনার পর দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছে।
চার্জশীটে প্রধান আসামিসহ এজাহারনামীয় ছয়জন আসামির নাম বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে হোসেনপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামান টিটু বলেন, পরিপূর্ণ তদন্তের ভিত্তিতে মামলার চার্জশীট দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বাদীপক্ষের কোন আপত্তি থাকলে তারা আদালতে নারাজি দিতেপারেন।