শাহ্ আলম ভূঁইয়া, ময়মনসিংহ:
ময়মনসিংহ নগরীর অদূরে ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী দক্ষিণ চরকালীবাড়ীতে হিজড়াদের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে একটি মসজিদ। এখানে হিজড়াদের পাশাপাশি অন্যান্য মুসল্লিরাও একই কাতারে নামাজ পড়ছেন। টিন দিয়ে বানানো সেমি পাকা মসজিদটির নাম রাখা হয়েছে ‘দক্ষিণ চরকালীবাড়ী আশ্রয়ণ জামে মসজিদ।’
বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চরকালীবাড়িতে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৩টি ঘরে ৪০ জন হিজড়া থাকেন। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশেই হিজড়াদের জন্য ৩৩ শতাংশ জায়গায় মসজিদ ও কবরস্থানের জন্য জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে ২ লাখ টাকা হাদিয়া দেয়।
এরপর হিজড়ারা নিজেদের শ্রম ও অর্থে মসজিদটি তৈরি করেন। এখন মসজিদে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তারাবির নামাজও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের জন্য হিজড়াদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনও নামাজ পড়তে মসজিদে আসছেন।
মসজিদ চালুর প্রসঙ্গে জয়িতা তনু হিজড়া বলেন, নিজেদের তৈরি মসজিদে নামাজ আদায় করব, এটা আমাদের স্বপ্ন ছিল। মসজিদ তৈরির পর সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। তারাবির পর আমরা হুজুরের কাছে আরবি শিক্ষা গ্রহণ করি।
হিজড়া কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আবদুর রহমান আজাদ বলেছেন, এ ধরনের মসজিদ এখানে এই প্রথম। আগেও শহরে হিজড়াদের জন্য মসজিদ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল; তবে বিভিন্ন কারণে তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ কারীমুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াই। কারও কোনো অভিযোগ নেই। সাধারণ মানুষও হিজড়াদের সঙ্গে নামাজ পড়েন। ঢাকার বড় আলেমদের মাধ্যমে জেনেছি, এটি দেশের একমাত্র হিজড়াদের মসজিদ। নিয়মশৃঙ্খলা ও শিষ্টাচার মেনেই মানুষগুলো বসবাস করছেন। ‘
ময়মনসিংহ জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, মসজিদ নির্মাণ একটি ভালো উদ্যোগ। আমরাও তাদেরকে সাধ্যমত সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া জানান, হিজড়ারা তাদের আগ্রহ এবং প্রতিবন্ধকতার কথা জানালে মসজিদ নির্মাণের জন্য তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে খাসজমি বরাদ্দ দেয়া হয়। পরে অনুদানের টাকা মিলিয়ে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে।