
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সরকারি বদলি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি লাগবে বলে জানিয়েছেন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির সচিব জাহাংগীর আলম।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে এ কথা বলেন সচিব জাহাংগীর।
তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর আজ থেকে বদলি ও নিয়োগের ক্ষেত্রে আগে থেকে ইসির অনুমতি নিতে হবে।
সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ এবং আরপিও -এর ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচনের কাজে সহায়তা দেওয়া নির্বাহী বিভাগের কর্তব্য। কোনো কর্মকর্তা দায়িত্ব পাওয়ার পরে তাকে অব্যাহতি না দেয়া পর্যন্ত চাকরির অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তিনি ইসির অধীনে প্রেষণে আছেন বলে গণ্য হবেন।
আরপিও-এর ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচনের সময়সূচি জারি হওয়ার পর থেকে ফল ঘোষণার পর ১৫ দিন পর্যন্ত ইসির অনুমতি ছাড়া কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্যত্র বদলি না করার বিধান রয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিধান জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) ইসি এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করছে। যেখানে সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বা থাকার যোগ্যতা-অযোগ্যতা সংক্রান্ত সংবিধানের ৬৬(১) (২) অনুচ্ছেদে ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১২(১) অনুচ্ছেদে বিধান রয়েছে। সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের “প্রজাতন্ত্রের কর্ম” ও “সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ” এর ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, অনুচ্ছেদ ১২ এর উপ-ধারা (ড) অনুযায়ী কোম্পানীর পরিচালক বা ফার্মের অংশীদার কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত কোনো ঋণ বা তার কোনো কিস্তি মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের পূর্বে পরিশোধে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হবেন।
আরও যে কারণে অযোগ্য হবেন প্রার্থীরা, কৃষি কাজের জন্য গৃহীত ক্ষুদ্র কৃষিঋণ ব্যতীত, মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে ব্যাংক থেকে গৃহীত কোনো ঋণ বা তার কোনো কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হবেন। সেই সাথে উপদফা (ঢ) অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে প্রদেয় সরকারি টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি বা অন্য কোনো সেবা প্রদানকারী সংস্থার বিল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে অযোগ্য হবেন।
মেয়র ও চেয়ারম্যানদের প্রার্থী হতে যে নির্দেশনা
উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মেয়রের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি/স্বায়ত্বশাসিত/আধা-স্বায়ত্বশাসিত ও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অফিস/প্রতিষ্ঠানের বা করপোরেশন অথবা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, কর্তৃপক্ষ এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য পদ্ধতিগতভাবে পদত্যাগ করতে হবে।
ছবিসহ ভোটার তালিকা
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রণীত ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার করতে হবে। ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের কাজে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ছবিসহ ভোটার তালিকা ব্যবহার করবেন। তবে প্রার্থী বা তার নির্বাচনি এজেন্ট বা পোলিং এজেন্টকে ছবিছাড়া ভোটার তালিকার সিডি ক্রয় করতে পারবেন। এজন্য জেলা বা উপজেলা পর্যায় হতে অথবা রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের অফিস হতে মনোনয়নপত্র গ্রহণের সময় নির্বাচনি এলাকার আওতাধীন প্রতি ইউনিয়নের জন্য ৫০০ টাকা এবং সিটি করপোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড/পৌরসভার প্রতি ওয়ার্ডের জন্য ৫০০ টাকা হারে ট্রেজারি চালান/পে-অর্ডার মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হবে। ট্রেজারি চালানের কোড নং ১-০৬০১-০০০১-২৬৩১’ নবসৃজিত কোড ’১০৬০১০১১০০১২৫-১৪২৩২৫৩’। ছবিসহ ভোটার তালিকা শুধুমাত্র নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা ব্যবহার করবেন।
রিটার্নিং অফিসার ও সহকারি রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ
নির্বাচন পরিচালনার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর নির্বাচনি এলাকার জন্য বিভাগীয় কমিশনারদের এবং অন্যান্য নির্বাচনি এলাকার জন্য জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের স্ব-স্ব উপজেলার জন্য এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, সিটি করপোরেশনের জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসার, উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার, ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার, উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার অথবা অন্য কোনো কর্মকর্তাকে সহকারি রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের কর্মক্ষেত্রও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনা সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা আইন ও বিধি মোতাবেক রিটার্নিং অফিসারকে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করা হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ সাপেক্ষে, রিটার্নিং অফিসারের অধীনে থেকে প্রয়োজনবোধে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন।
সময়সূচি সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি
গণ-প্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ১১ এর দফা (২) ও (৩) অনুসারে সময়সূচি জারির পর, যথাসম্ভব, রিটার্নিং অফিসাররা তাদের আওতাভুক্ত নির্বাচনী এলাকায় সময়সূচির প্রজ্ঞাপন এবং সময়সূচির আলোকে গণ-বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। গণ-বিজ্ঞপ্তিতে কমিশন কর্তৃক ঘোষিত সময়সূচির উল্লেখ থাকবে। রিটার্নিং অফিসার/সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নিকট মনোনয়নপত্র দাখিলের স্থান ও সময় উল্লেখ করে একই গণ-বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মনোনয়নপত্র আহ্বান করতে হবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, মনোনয়নপত্র অফিস চলাকালীন সময় অর্থাৎ সকাল ৯টা হতে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গৃহীত হবে। আরও উল্লেখ্য যে, নির্ধারিত তারিখ ও সময়ের মধ্যে সরাসরি মনোনয়নপত্র দাখিলের পাশাপাশি অনলাইনেও মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। গণ-বিজ্ঞপ্তির অনুলিপি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার দর্শনীয় স্থানসমূহ এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের অফিসে টাঙ্গিয়ে দিতে হবে।
মুদ্রিত ছবিসহ ভোটার তালিকার সঙ্গে ছবিছাড়া সিডি যাচাই
প্রার্থীদের দেয়া ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডির সঙ্গে ছবিসহ মুদ্রিত ভোটার তালিকা শতভাগ যাচাই করে ভোটকেন্দ্রে প্রেরণ করতে হবে।