
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ২০২১ সালে ঢাবির জগন্নাথ হলের মাঠে একেবারেই উদযাপন করা যায়নি সরস্বতী পূজা। পরের বছর সীমিত পরিসরে উদযাপন হলেও ছিল না চিরচেনা আমেজ। এবার আবারও পুরোনো আবহ ফিরেছে জগন্নাথ হলের সরস্বতী পূজায়।
বিদ্যার দেবী সরস্বতীর অর্চনায় মুখর হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল মন্দির ও মাঠ এলাকা।
দীর্ঘ দুই বছর পর সেখানে বাধাহীনভাবে দেবীর আরাধনা করতে পারছেন ভক্তরা।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ২০২১ সালে জগন্নাথ হলের মাঠে একেবারেই উদযাপন করা যায়নি সরস্বতী পূজা। পরের বছর সীমিত পরিসরে উদযাপন হলেও ছিল না চিরচেনা আমেজ। এবার আবারও পুরোনো আবহ ফিরেছে জগন্নাথ হলের সরস্বতী পূজায়।
বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর কৃপার আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জগন্নাথ হল মাঠে আলাদা মণ্ডপ বানিয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সকাল থেকেই মন্দিরে ভক্ত আর দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।
বাংলাদেশে এককভাবে সবচেয়ে বেশি পূজা মণ্ডপ হয়ে থাকে এ হলের আঙিনায়। নানা আয়োজনে হল প্রাঙ্গণে এ বছর ৭৩টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়।
প্রতি বছরই সবচেয়ে আকর্ষণীয় হয় চারুকলা অনুষদের পূজা মণ্ডপ। অনুষদের শিক্ষার্থীরা এবার হলের পুকুরে সাদা হাঁসের ওপর বসিয়েছেন দেবী সরস্বতীকে। ভক্তরা পুকুরের চারপাশ ঘিরে আরাধনা করছেন দেবীর।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জগন্নাথ হলের মন্দিরে আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলিতে সিক্ত হন শ্বেত পদ্মে আসীন বীণাপাণি।
জগন্নাথ হলের পাশাপাশি ঢাবির ছাত্রী হলগুলোতেও চলছে বিদ্যার দেবীর আরাধনা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। দেবীর এক হাতে পুস্তক, আরেকটিতে বীণা। এ জন্য তাকে বীণাপাণিও বলা হয়, যার বাহন শুভ্র রাজহাঁস।
প্রতিমা স্থাপনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টায় আনুষ্ঠানিকভাবে পূজার কার্যক্রম শুরু হয়। সাড়ে ৭টায় বাণী বন্দনা, ৮টা ১০ মিনিটে পুষ্পাঞ্জলি, সাড়ে ১১টায় প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে পূজার কার্যক্রম শেষ হয়। বেলা ১১টা ১০ মিনিট থেকে শুরু হয় হাতেকড়ি।
বাবা-মা সন্তান নিয়ে এসেছেন হাতেখড়ি দিতে। কেউ কেউ সঙ্গে করে বই নিয়ে এসেছেন দেবীর চরণ স্পর্শের জন্য।
বাবা-মায়ের সঙ্গে পূজা করতে এসেছে ছোট্ট পায়েল প্রামাণিক। তার হাতেখড়ি হয়েছে আজ। পুরোহিতের হাতে পাটখড়ি দিয়ে বেল পাতায় লিখেছে সে।
হাতেকড়ি শেষে বিকেল ৪টায় অতিথি আপ্যায়ন হবে।
দীর্ঘ দুই বছর পর ধুমধামে বিদ্যা দেবীর আরাধনা করতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরা।
তাদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র রাজ কুমার বলেন, ‘অসাধারণ। বিদ্যা দেবীর আরাধনা করতে সারা বছর আমরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করি। দুই বছর পর উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই আরাধনা করতে পারছে। কারও মুখে বা চোখে কোনো শঙ্কা নেই।
‘মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি, যেন জগতের সকলে সুখী হয়। আর আমার সামনে মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা, সেটি যেন ভালোভাবে সম্পন্ন হয়।’
পূজা দেখতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবিদ হাসান বলেন, ‘আমার হিন্দু বন্ধুদের আমন্ত্রণে তাদের পূজা দেখতে এসেছি। আমাদের ঈদের মতোই আনন্দ তাদের সবার মাঝে। তাদের সঙ্গে মিশে আমারও আনন্দ লাগছে।’
মেয়ে চন্দ্রিমাকে নিয়ে হাজারীবাগ থেকে পূজা দিতে আসা নিপু তন্বীর প্রার্থনা, তার মেয়ে যেন বিদ্যা-বুদ্ধিতে আলোকিত মানুষ হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অনু সরকার বলেন, ‘মায়ের কাছে আমার অনেক প্রার্থনা। উল্লেখযোগ্য প্রার্থনা ছিল, সামনে আমার ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা, সেটি যেন ভালো হয়। যে আশা নিয়ে গ্রাম থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছি, সেটি যেন পূর্ণ হয়।