Uncategorized

লেনদেন কমল শেয়ারবাজারে । সময়ের চিত্র

২০০৬ সালের শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ী, প্রতি বছর নিট মুনাফার ৫ শতাংশ দিয়ে ডব্লিউপিপিএফ গঠন এবং তা কর্মীদের মধ্যে বিতরণ বাধ্যতামূলক, কিন্তু বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার কর্তৃপক্ষ ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় ওই ফান্ড গঠন করেনি।

আইন মানছে না পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বারাকা পাওয়ার লিমিটেড। শ্রম আইন অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) গঠন করেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ, তবে আগের অর্থবছরে ফান্ড গঠন করা হলেও দুটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের মুনাফা থেকে কখনোই ডব্লিউপিপিএফ গঠন করা হয়নি।

এভাবে আইন না মেনে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে কোম্পানি। কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য জানা গেছে।

২০০৬ সালের শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ী, প্রতি বছর নিট মুনাফার ৫ শতাংশ দিয়ে ডব্লিউপিপিএফ গঠন এবং তা কর্মীদের মধ্যে বিতরণ বাধ্যতামূলক, কিন্তু বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার কর্তৃপক্ষ ২০২১-২২ অর্থবছরের ব্যবসায় ওই ফান্ড গঠন করেনি।

বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশেন (বিআইপিপিএ) ওই ফান্ড গঠনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি চেয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। সেই আবেদন মঞ্জুর না হতেই কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কার্যকর করা শুরু করে দিয়েছে।

এমনিতেই বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের সাবসিডিয়ারি কর্ণফুলী পাওয়ার ও বারাকা শিকলবাহা পাওয়ার ডব্লিউপিপিএফ গঠন না করে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। এবার বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারও একই অনিয়ম করেছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিগুলো কয়েক কোটি টাকার নিট মুনাফা ও সম্পদ বেশি দেখিয়েছে।

যেভাবে অনিয়ম

২০২০-২১ অর্থবছরে ১৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার নিট মুনাফা করা বারাকা পতেঙ্গায় ১ কোটি ৬ লাখ টাকার ডব্লিউপিপিএফ ফান্ড গঠন করা হয়েছিল, তবে ওই অর্থবছরে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোসহ বারাকা পতেঙ্গার নিট মুনাফা হয়েছিল ১০৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। পুরোটার ওপর ফান্ড গঠন করলে হতো ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরে সাবসিডিয়ারিসহ কোনো কোম্পানিতেই ডব্লিউপিপিএফ ফান্ড গঠন করেনি বারাকা পতেঙ্গা কর্তৃপক্ষ। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে সমন্বিতভাবে (কনসোলিডেট) নিট মুনাফা হয়েছে ৪২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর ওপরে ৫ শতাংশ হারে ফান্ড গঠন করলে হতো ২ কোটি ১১ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানির সচিব মোহাম্মদ রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবেদনে সবকিছুই দেয়া আছে। সেটার বাইরে কোনো প্রশ্ন থাকলে জানতে ফোন করবেন।’

২০২১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের পরিশোধিত মূলধন ১৭২ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। উদ্যোক্তা বা পরিচালক ছাড়া অন্য বিনিয়োগকারীদের মালিকানায় রয়েছে ৬১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

বর্তমানে কোম্পানির শেয়ার ইস্যুমূল্যের নিচে লেনদেন হচ্ছে। মঙ্গলবার শেয়ারটি ২৯ টাকা ৩০ পয়সায়, অর্থাৎ ফ্লোর প্রাইসে বেচাকেনা হয়। অথচ কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস ছিল ৩২ টাকা।

কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হওয়ার ৮ মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে ওই প্রাইসের নিচে নেমে আসে। গত বছরের ৬ মার্চ সর্বপ্রথম শেয়ারটি কাট-অফ প্রাইসের নিচে নামে।

তারপরেও বিনিয়োগকারীদের চাহিদা কম থাকা এমন কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ৩২ টাকার কাট-অফ প্রাইসে খুশি হতে পারেননি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বুক বিল্ডিংয়ে কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে নতুন কড়াকড়ি আরোপের কারণে ৩২ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস। অন্যথায় কারসাজির মাধ্যমে প্রাইস অনেক ওপরে নিয়ে যেত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বারাকা পাওয়ারের জন্য গড় ৩০ টাকা ৫০ পয়সা করে প্রতিটি শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২২৫ কোটি টাকা শেয়ারবাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৯ টাকা করে ইস্যুর কারণে গড় প্রাইস ৩০ টাকা ৫০ পয়সায় নেমে আসে।

২০২১-২২ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডাররা শেয়ারপ্রতি ১ টাকা লভ্যাংশ পেয়েছেন। অর্থাৎ ৩০ টাকা ৫০ পয়সা বিনিয়োগের বিপরীতে প্রাপ্তি ১ টাকা বা ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। ঝুঁকিমুক্ত ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিটের মুনাফা (এফডিআর) এর চেয়ে বেশি হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button