জাতীয়

রোহিঙ্গাদের অধিকার ও সম্মানসহ মিয়ানমারে ফেরাই একমাত্র সমাধান- তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু একটি মানবিক সমস্যা এবং এর সমাধান হওয়া জরুরি উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্‌মুদ বলেছেন, আমরা মনে করি রোহিঙ্গাদের সমস্ত নাগরিক অধিকার দিয়ে, সম্মান বজায় রেখে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াই একমাত্র সমাধান।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে মিয়ানমারের ওপরে যে চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন, সেটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখানে চীনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসাথে ভারতের সাথেও আমরা আলাপ আলোচনা করেছি। তারাও মিয়ানমারকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। আশা করছি সমাধান হবে।

শনিবার রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট ভবন মিলনায়তনে ‘গণহত্যা ও বিচার : রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের অবস্থান’ (জেনোসাইড এন্ড জাস্টিস : বাংলাদেশ’স রেসপন্স টু রোহিঙ্গা ক্রাইসিস) সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এ কথা বলেন। ঢাবি’র সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এ সেমিনার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান।

মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের জোর কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে। আমরা যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে এর সমাধান চাই না। বিএনপির কাছে হয়তো সমাধানের পথ ভিন্ন, তারা কূটনৈতিক নয়, অন্য সমাধানের কথা চিন্তা করে। কিন্তু আমরা সর্বোতভাবে সবসময় এর সমাধানের জন্য চেষ্টা করে আসছি এবং এর ফলে বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে, কিন্তু পরে তাদের ‘কমিটমেন্ট’ রক্ষা করেনি জানিয়ে হাছান বলেন, আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে এবং ক’দিন আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি হয়েছে।

রোহিঙ্গা সমস্যার নানা দিক তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এখন দেশে রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্যাম্পগুলো জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের আস্তানা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ধর্মান্ধ ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের সেখান থেকে ‘রিক্রুটমেন্টে’র একটি বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে সেখানকার সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেমন অবনতি হচ্ছে তেমনি এর সমাধান না হলে তা আমাদের দেশ শুধু নয়, পুরো অঞ্চলের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’

সেমিনার শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি নিজেরাই যখন ক্ষমতায় ছিল, তারা এ সমস্যা ঠিকভাবে সমাধান করতে পারেনি। ১৯৯১ সালে এবং এর আগে ১৯৭৬-৭৭ সালে যখন রোহিঙ্গারা এসেছিল সবাইকে তারা ফেরত পাঠাতে পারেনি। হাজার হাজার রোহিঙ্গা রয়েই গিয়েছিল।

বিএনপির অপর সমালোচনা ‘আওয়ামী লীগই বিদেশিদের কাছে যায় এবং এরপরেও ব্রিকসে জায়গা পায়নি’ এর জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিএনপিই ক্ষণে ক্ষণে বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়, কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হয়ে তাদের সুর পালটে গেছে। আর ব্রিকস সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং ব্রিকসের সদস্য হওয়ার জন্য ৪০টিরও বেশি দেশ আবেদন করেছে, সেখান থেকে ৬টি দেশকে নেওয়া হয়েছে, বাকিদেরও পর্যায়ক্রমে নেওয়া হবে।

হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা ওয়াশিংটন টাইমসে নিজের নামে নিবন্ধ লিখেছিলেন যাতে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস না কেনার জন্য, বাংলাদেশকে সহায়তা না করার জন্য। মির্জা ফখরুল সাহেব নিজে কংগ্রেসম্যানদের কাছে দেশের বিরুদ্ধে চিঠি লিখেছিলেন। আবার তারা কয়েকজন কংগ্রেসম্যানের সই জাল করে এখানে বিবৃতি দিয়েছিল, পরে ধরা খেয়েছে।’

‘সিজিএস পরিচালক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। ঢাবি’র আইন বিভাগের অধ্যপক ড. জমিলা এ চৌধুরী স্বাগত ভাষণ দেন।

ঢাবি’র সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান, বাংলাদেশে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস)-এর প্রতিনিধি Johannes Van Der Klaauw, নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডোর ইশফাক ইলাহি চৌধুরী, দেশান্তর ও বাস্তুচ্যুতি বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিস পরিচালক ড. এম সঞ্জীব হোসেন সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button