দেশ

রাজশাহীতে ভর্তি জালিয়াতি ও প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য গ্রেপ্তার

সেলিম সানোয়ার পলাশ, রাজশাহী:
রাজশাহীতে বিভিন্ন নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার জাল প্রশ্নপত্র ও প্রবেশপত্র তৈরি করে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ
(ডিবি) বুধবার দুপুরে নগরীর নিউমার্কেট এলাকার পিজি টাওয়ারের ১০ তলায়
অভিযান চালিয়ে এ চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

এসময় উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড, পরীক্ষার প্রবেশপত্র, জীবন বৃত্তান্ত, নাগরিক সনদপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
গ্রেপ্তারকৃতের নাম নয়ন ইসলাম (২৫)। তিনি রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার অচিনঘাট এলাকার আজগর হোসেন মণ্ডলের ছেলে। নয়ন রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা।

রাজশাহী মহানগর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) বিজয় বসাক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। তিনি জানান, সারাদেশব্যাপী আসন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস,
জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়া ও বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দিয়ে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু এবং চাকরি প্রার্থীদের নিকট হতে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন নিউমার্কেট
সংলগ্ন পিজি টাওয়ার বিল্ডিংয়ের ১০ তলায় অভিযান চালিয়ে চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা নগরীর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মালিকদের সহযোগিতায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও
বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তিচ্ছ ও চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে পরীক্ষার প্রবেশপত্রের কপি এবং চুক্তি মোতাবেক অর্থের জিম্মা হিসেবে তাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মূল সনদপত্র,
রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহ-সহ প্রাথমিক খরচ বিকাশ, রকেট এবং নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নগদ টাকা সংগ্রহ করে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪ মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম নগরীর
পিজি টাওয়ারে অভিযান পরিচালনার জন্য গেলে জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে পালিয়ে যায়। ফ্ল্যাটের মালিকের মাধ্যমে জানা যায় ভাড়াটিয়ার নাম নয়ন ইসলাম। তিনি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে বসবাস করতো। বাড়ির মালিক আরও জানান, নয়ন নিজেকে কখনও ডাক্তার, কখনও সরকারি কর্মকর্তা বা এনজিও কর্মী পরিচয়
দিয়ে বিভিন্ন চাকরি প্রার্থী ও ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করে। অনেকে এখানে আসা-যাওয়া করে।

গোয়েন্দা পুলিশ প্রতারক চক্রের মূল হোতাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে আসামি নয়নসহ অন্যান্য সদস্যরা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরসমূহে বিশেষ পত্র প্রেরণ
করেন। কিন্তু আসামি নয়ন এর পূর্বেই ভারতে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে আসামি নয়ন ইসলাম গত ৬ মার্চ বিকেলে যশোর জেলার বেনাপোল
স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বেনাপোল ইমিগেশন পুলিশ তাকে আটক
করে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করেন। বিষয়টি তারা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারকে জানান।

গত ৭ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫ পুলিশ কমিশনার নির্দেশক্রমে গোয়েন্দা পুলিশের ওই টিম যশোর জেলার বেনাপোল পোর্ট থানায় উপস্থিত হয়ে আসামি নয়নকে হেফাজতে নেয়।

জিজ্ঞাসাবাদে নয়ন জানায়, তিনি ও তার সহযোগী পলাতক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সনেট এবং আরও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন সহযোগী পরস্পর যোগসাজসে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করে বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থী ও বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনের বিভিন্ন অ্যাপস (হোয়াটস অ্যাপস, ভাইবার, টেলিগ্রাম) এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে তাদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে এবং বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
করে দিবে মর্মে আশ্বাস দিয়ে ডিজাটাল ডিভাইস (মোবাইল ফোন) ব্যাবহার করে মোবাইল ফিন্যান্স (বিকাশ, রকেট, নগদ) অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।

পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তার আসামিসহ পলাতক
আসামিদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পেনাল কোডে একটি মামলা দায়ের করা করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button