জাতীয়রাজনীতি

রাজধানীতে আজ আওয়ামীলীগ বিএনপির সমাবেশ

সময়ের চিত্র ডেস্ক: বড় দুই দলকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা ২টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ আর এক দফা দাবিতে বিএনপি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করছে। দুই দলই রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি শোডাউন করে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দিচ্ছে। এর মাধ্যমে রাজপথ দখলেরও চেষ্টা করছে।

আজ আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। এ নিয়ে রাজনীতিতে উত্তাপ বিরাজ করছে। এ ছাড়া জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সবার মনে একই প্রশ্ন, কী হচ্ছে আজকের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে? সংঘাত-সহিংসতার মতো কোনো ঘটনা ঘটবে না তো?

সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। আর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ কর্মসূচি পালন করতে চায়। কিন্তু কাউকেই পছন্দের ভেন্যুতে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিএনপিকে বলা হয় গোলাপবাগ মাঠে আর আওয়ামী লীগকে বলা হয় শেরেবাংলা নগর পুরনো বাণিজ্য মেলা মাঠে কর্মসূচি পালন করতে। দুই দলের অনড় অবস্থানের কারণে বৃহস্পতিবার তাদের ২৩ শর্ত সাপেক্ষে নিজ নিজ পছন্দের ভেন্যুতেই কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়। এর পর দুই দলই দ্রুত মঞ্চ নির্মাণসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে।

এদিকে মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়েই সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যেতে চায় বিএনপি। তবে এইদিন রাজধানীতে রাজপথের বিরোধী দল খ্যাত বিএনপি ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে চারদিকে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করছে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনও। বিএনপির মহাসমাবেশের দিনে তাদের শান্তি সমাবেশে লাখ লাখ নেতাকর্মীর সমাগম ঘটিয়ে রীতিমতো জনসমুদ্রে পরিণত করার কথা জানিয়েছে আয়োজকরা। শুধু শান্তি সমাবেশই নয়, শুক্রবার মহানগরীর প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লায় দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক ও শান্তি অবস্থানে থাকারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলের পক্ষ থেকে।

আজ শুক্রবার ছুটির দিন হলেও সারাদেশে একযোগে প্রকাশিত হচ্ছে এসএসসি ও সমপর্যায়ের পরীক্ষার ফল। ফল জানতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভিড় করবেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকরাও নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবেন। তাই বড় দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

মহাসমাবেশের আগেই দলের সর্বোচ্চ ফোরাম ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনের কৌশল চূড়ান্ত করে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় নির্বাচনের আগে এক দফা দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে ফেলতে রাজধানীতে মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। আজ প্রথম মহাসমাবেশ পালন শেষে সরকারকে আল্টিমেটাম ও নতুন কর্মসূচি দেবে। দ্বিতীয় মহাসমাবেশ করবে সেপ্টেম্বরে এবং নির্বাচনের আগে আরও অন্তত একটি মহাসমাবেশ করবে। এতে সারাদেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের জড়ো করে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করে রাজপথ দখলে নিতে চায় দলটি। তবে মাঠ ছাড়বে না আওয়ামী লীগও।

গত বছর ১০ ডিসেম্বর আন্দোলনের ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণার পর প্রথম দফায় ২৪ ডিসেম্বর ঢাকা ছাড়া সকল মহানগর ও জেলা সদরে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। তবে ওইদিন রাজধানীতে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন থাকায় ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় পালন করা হয় গণমিছিল কর্মসূচি। এর পর থেকে বিএনপি এককভাবে এবং সমমনা দলগুলোকে নিয়ে ধাপে ধাপে সমাবেশ, মানববন্ধন, পদযাত্রা ও গণমিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পর গত ১২ জুলাই পল্টনের সমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হয় আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচি। একইদিন আওয়ামী লীগও বিশাল সমাবেশ করে রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে মোকাবিলা করে।

আজকের মহাসমাবেশ সফল করতে রাজপথের বিরোধী দল খ্যাত বিএনপি ও এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগ রাজধানীতে নিজ নিজ কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি জোরদার করছে আগেই।

দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল নিজ নিজ দলের কর্মসূচি সফল করতে বিভিন্ন স্তরের নেতাদের নিয়ে অনেক প্রস্তুতি সভা করেছে। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে উপস্থিত থাকতে বিভিন্ন ইউনিট কমিটিগুলোকে আগেই নির্দেশ দেয়। আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, বিএনপির মহাসমাবেশে যত নেতাকর্মীর উপস্থিতি ঘটবে তারচেয়ে অনেক বেশি নেতাকর্মী ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশে উপস্থিত হচ্ছে।

বিএনপির এই মহাসমাবেশের টার্গেট আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে চাপে ফেলে দাবি আদায় করা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের টার্গেট অতীতের মতো রাজপথেই বিএনপিকে মোকাবিলা। বিএনপি আজকের মহাসমাবেশ থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে আগেই। বিপরীতে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত নানা কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথ নিজেদের দখলে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। দুই পক্ষের এমন অনড় অবস্থানের কারণে জনমনে শঙ্কাও বাড়ছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে যাতে কোনো ধরনের সহিংসতা কিংবা অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানানো হয়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button