যশোর প্রতিনিধি:
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের পর যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন হোটেল দ্য জাবির যশোরে অগ্নিসংযোগ করেছে বিজয় মিছিলে থাকা বিক্ষুব্ধ জনতা। এতে দগ্ধ হয়ে ১৩ জন নিহত ও ২০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ রাত সাড়ে ৯টার দিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে জাবির হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে।
এ সময় হোটেলের ভেতরে অনেকে আটকা পড়েন। হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকারী দল ১৪ তলা বিশিষ্ট হোটেলের ছাদ থেকে একজনকে উদ্ধার করে। আরো কয়েকজনকে ১৪ তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে উদ্ধারের জন্যে নিশানা উড়াতে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি দল সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে যশোর শহরে বিজয় মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। ওই মিছিল থেকে বিক্ষুব্ধ লোকজন চিত্রা মোড়ে অবস্থিত হোটেল দ্য জাবির ইন্টান্যাশনালে ভাঙচুর শুরু করে। দ্বিতীয় দফায় ৪টার দিকে তারা অগ্নিসংযোগ করে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে যান।
এ সময় হোটেলে আটকা পড়া কয়েকজন ১৪ তলার বারান্দায় গিয়ে উদ্ধারের জন্যে হাত নেড়ে আকুতি জানান। উদ্ধারকারী একটি হেলিকপ্টার হোটেলে ছাদে ল্যান্ড করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ সময় আটকাপড়া এক ব্যক্তি ছাদে গিয়ে দাঁড়ালে হেলিকপ্টার তাকে উদ্ধার করে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ স্থানীয় এই প্রতিনিধিকে বলেন, জাবির হোটেলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রথমে পাঁচজনের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে আনে ফায়ার সার্ভিসের টিম। এরপর আরো ৮ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
আহত হয়েছে ২০ জনের মতো। আহতদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক।
হোটেলে কতজন আটকা পড়েছে বা কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানার জন্যে হোটেলের মালিক শাহীন চাকলাদারের সেলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস যশোরের উপপরিচালক, যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপাপার বেলাল হোছাইনের ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।
এদিকে, শাহীন চাকলাদারের হোটেল ছাড়াও তার শহরের কাজীপাড়া কাঠালতলাস্থ বাসভবন, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, শহরের বকুলতলায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, চারখাম্বা মোড়ে শেখ রাসেলের ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে কারফিউ ভেঙে যশোর শহরের চাঁচড়া মোড়ে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের ঈদগাহ মোড়ে অবস্থান নেয় জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দিনভর তারা সরকার পতনের নানা স্লোগান দেন। এর পর বিকাল চার দিকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন- এমন সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরে আন্দোলনে থাকা ছাত্র-জনতা ও বিএনপির নেতাকর্মীরা শহরে আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে দুবৃর্ত্তরা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় বলে স্থানীয়রা জানান।
এ ছাড়া শহরের চাঁচড়ায় যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় দুবৃর্ত্তরা।
এদিকে, যশোরে বিভিন্ন স্থাপনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান। তিনি বলেন, অনেকদিন ধরে যশোরে আন্দোলন করে আসছি। যশোরে কোথাও সহিংসার ঘটনা ঘটেনি। রবিবার আমাদের বিজয়ের দিনে এমন ঘটনা ঘটেছে, সেটি দুঃখজনক। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব ঘটনা ঘটায়নি।
এর আগে দুপুর থেকে যশোরে সড়কে সড়কে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। জাতীয় পতাকা নিয়ে তারা উল্লাস করছে। স্লোগান দিতে দেখা যায়। বিকেলে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশ ছেড়েছেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অলিগলি থেকে সড়কে বেরিয়ে মানুষ স্লোগান দিতে দিতে রাজপথে বেরিয়ে আসে।