সময়ের চিত্র ডেস্ক:
যথাসময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিয়েছেন। ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আর কোন সংশয় নেই। নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত রয়েছেন। যে কোন সময় তফসিল ঘোষণা করবেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সিইসি বলেন, সংবিধান অনুসারে নির্র্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন করতে আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা খুব দ্রুত তফসিল ঘোষণা করব। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি শেষ হবে। এক্ষেত্রে ৯০ দিনের গণনা শুরু হয়েছে ১ নভেম্বর থেকে। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
বঙ্গভবনে সাক্ষাৎকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। এ সময় সিইসি জানান, সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাহী বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সাক্ষাৎ অনুষ্ঠান দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়ে চলে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী। এ সময় সিইসির সঙ্গে অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব এবং রাষ্ট্রপতির সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎ শেষে সিইসি বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সাংবিধানিক রীতিনীতি ও বিধিবিধান অনুসরণ করে নির্বাচন কমিশনকে সাহসিকতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন নির্বাহী বিভাগসহ জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা। রাষ্ট্রপ্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে এ লক্ষ্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
সিইসি জানান, অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি আশা করেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুশৃঙ্খলভাবে হবে। সিইসি বলেন, রাষ্ট্রপতিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে অবহিত করেছি। তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন। আমরা বলেছি, প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির সাহায্য কামনা করব। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যে কোনো ধরনের সহযোগিতা দেবেন। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা যে কোনো মূল্যে অব্যাহত রাখতে হবে। তাই যে কোনো মূল্যে নির্বাচন করতে হবে।
সিইসি বলেন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একসঙ্গে চলে। নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের মতামতের প্রতিফলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়। তাই রাষ্ট্রপতি আশা করেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সরকারসহ সবাই নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করবে।
সিইসি বলেন, ভোটগ্রহণের শেষ সময় রাষ্ট্রপতি জানেন। যে কোনো মূল্যে আমাদের ২৯ জানুয়ারির আগেই ভোটগ্রহণ করতে হবে। তবে এখনো পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নেইনি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসেছি। এখন নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করব। আমরা রাষ্ট্রপতিকে বলেছি, দ্রুত তফসিল ঘোষণা করব। কারণ, নির্বাচনের সময় হয়ে গেছে। তবে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তেমন আলোচনা হয়নি। আমরা শুধু আমাদের কথা বলেছি। প্রত্যাশা করছি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যাতে নির্বাচন হয়, সে ব্যাপারে সবার সহযোগিতা।
সিইসি বলেন, আমরা রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছি- আমাদের ওপর যে সাংবিধানিক দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে, সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময় ও নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা রাষ্ট্রপতিকে আশ্বস্ত করেছি যে, সবার সহযোগিতায় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার আলোকে যথাসময়ে নির্বাচন করতে সমর্থ হব। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা সব রাজনৈতিক দল, সরকার ও জনগণের সহযোগিতা কামনা করছি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা আগেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন। আর নারী ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার হচ্ছে ৮৫২ জন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। ৩০০ আসনের জন্য আলাদা আলাদা ভোটার তালিকার সেট প্রস্তুত করা হয়েছে। এই তালিকা অনুযায়ী প্রতিটি সংসদীয় আসনের ভোটগ্রহণ করা হবে।
ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করা দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। এই রেওয়াজ অনুসারে বঙ্গভবনে গিয়ে নির্বাচনের তফসিলের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সম্মতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর পরই কমিশনের সভা করে তফসিল ঘোষণা হবে। ১৪ অথবা ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় ইসি। আর রোডম্যাপ অনুসারে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে।