নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) মেয়র হিসেবে মো. আতিকুল ইসলামের দায়িত্ব গ্রহণের চার বছর হয়ে গেল। চার বছর পূর্তি উপলক্ষে ডিএনসিসি মেয়র তার অগ্রগতির সার্বিক চিত্র এবং আগামী এক বছরের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। সোমবার (১৩ মে) এ বিষয়ে ডিএনসিসির নগর ভবনের প্রধান কার্যালয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘খালগুলো দখলমুক্ত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান করেছি এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে এই অভিযান চলবে। সেই সঙ্গে আগামী এক বছর ডিএনসিসিতে নতুনভাবে যুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এসময় আক্ষেপ প্রকাশ করে মেয়র বলেন, পয়ঃবর্জ্যের সংযোগ পাইপ সরাসরি খালে ঢুকিয়ে দেওয়া সব বাড়িতে কলাগাছ থেরাপি’ দিতে না পারায় আমার আক্ষেপ রয়ে গেছে। যদি প্রতিটি বাড়ির পয়ঃবর্জ্যের পাইপে কলাগাছ ঢুকাইতে পারতাম তখন মনে শান্তি হইত। আমার ব্যর্থতা এখানেই। কীভাবে বারিধারা ও গুলশানের লোকেরা খালের মধ্যে বর্জ্যের লাইন দিয়ে দিচ্ছে? এটা অত্যন্ত কষ্টের বিষয় আমার কাছে।
ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের সফলতা ও ব্যর্থতার বিষয়ে জানতে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,পরীক্ষা যে দেয় সে কিন্তু রেজাল্ট দেয় না। আমরা পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছি। সফল, না ব্যর্থ সেটা আমার বলা ঠিক হবে না। এ দায়িত্ব আমি জনগণের ওপর ও সাংবাদিকদের ওপর ছেড়ে দিলাম।
সড়কের বাতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘৪৮ হাজার ৮১২টি বাতি লাগানো হয়েছিল। এর মধ্যে ১৬৮২টি বাতি বন্ধ আছে। বাতি লাগানো একটি চলমান প্রক্রিয়া। কোথাও বাতি লাগাতে লাগাতে আবার অন্য কোথাও সেটি নষ্ট হতেও পারে। আর একটি বাতি স্থাপন করতে গেলে তার ও সুইচসহ আরো যা লাগে সেসব মিলে একটি বাতির দাম নির্ধারণ করা হয়।
ডেঙ্গু নিয়ে মেয়র বলেন,ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা সারা বছরই কাজ করছি। এ বছর বর্ষার আগেই ৫৪টি ওয়ার্ডে মাসব্যাপী জনসচেতনতামূলক প্রচার অভিযান পরিচালনা করছি। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রত্যেক ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। বিটিআই আনার জন্য গতবছর উদ্যোগ নিয়েছিলাম, ঠিকাদার প্রতারণার আশ্রয় নেয়ায় তাকে কালো তালিকাভুক্ত করাসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে আমরা বিটিআই আনার বিষয়টি বন্ধ না করে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিজেরাই সরাসরি আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। মন্ত্রীসভায় অনুমোদন হয়েছে। দ্রুতই বিটিআই আনতে পারবো। প্রথমবারের মতো এডিসের লার্ভা জন্মাতে পারে এমন পরিত্যাক্ত দ্রব্যাদি নগদ টাকায় কিনে নিচ্ছি। কার্যকরভাবে ওষুধ ছিটানোর জন্য অত্যাধুনিক মেশিন বাফেলো টারবাইন নিয়ে আসবো, এটি প্রক্রিয়াধীন। সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি অভিযান চলমান রয়েছে।’
আফসোস করে তিনি বলেন, ‘খালগুলো দূষিত হয়ে যাচ্ছে। মানুষ কীভাবে বাথটাব, টেলিভিশন, ফ্রিজ, জাজিম খালের মধ্যে ফেলে দেয়, তা তার চিন্তায় আসে না। এগুলো করলে জলাবদ্ধতা হবেই।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন,অনলাইনভিত্তিক স্মার্ট সেবার পরিসর বৃদ্ধি করেছি। হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স প্রদান এগুলো অনলাইনে হচ্ছে। গুলশান ১ ও তালতলা মার্কেটে ক্যাশলেস লেনদেন ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্মার্ট পার্কিং চালু করেছি। গুলশান-২ এ এআই ভিত্তিক ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল চালুর মাধ্যমে প্রমাণ করেছি ডিএনসিসি ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল বাস্তবায়নে সক্ষম। আরো ছয়টি স্থানে এআই ভিত্তিক ট্রাফিক সিগন্যাল চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। সেবা সহজীকরণের লক্ষ্যে অনলাইন সেবার পরিসর বাড়াতে গুরুত্ব দিচ্ছি।
সাংবাদিকের আরেক প্রশ্নের জবাবে ইচ্ছা ছিল কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন করতে পারিনি উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘একটি স্মার্ট জবাইখানা করার ইচ্ছা আছে। আমি দ্রুতই এটি বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিব। এছাড়াও গাবতলিতে বৃক্ষ ও প্রাণী হাসপাতাল নির্মাণ করার ইচ্ছা রয়েছে।’
নগরে গাছ লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন,শহরের পরিবেশ রক্ষায় দুই বছরে দুই লাখ গাছ রোপণের ঘোষণা দিয়েছিলাম। গত বছর ৯০ হাজার গাছ রোপণ করা হয়েছে। আমরা বৃক্ষরোপণকে গুরুত্ব দিয়ে ৪৭ জন মালি নিয়োগ দিচ্ছি। দুইজম সুপারভাইজার নিয়েছি। এই বছর আরও দেড় লাখ গাছ রোপণ করা হবে।’
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন মো. আতিকুল ইসলাম। নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে ডিএনসিসির মেয়র হন তিনি। পরে ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন আতিকুল ইসলাম। পরবর্তীতে একই বছরের ১৩ মে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।