মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:
মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গায়িকা মমতাজ বেগমকে প্রধান আসামি করে মানিকগঞ্জে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল সোমবার (৪নভেম্বর) বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার গোবিন্দল গ্রামে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত আলমগীর হোসেনের স্ত্রী রাফেজা (৩৭) বাদী হয়ে এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। যার সি আর মামলা নং ৮৪৯( সিং-২৪)।
সাবেক পৌর মেয়র মীর মো. শাহজাহান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান খান হান্নান, সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বলধরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মাজেদ খান, সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান ওরফে ভিপি শহীদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ সায়েদুল ইসলাম, পৌর কমিশনার আব্দুস সালাম খান, সমেজ উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রমেজ উদ্দিনসহ সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তৎকালীন দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ৮২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ২০/২৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলাটি হয়েছে।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে নিহত আলমগীর হোসেন তার স্ত্রীর জন্য শাড়ি কিনতে গোবিন্দল নতুন বাজারে যান। আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীসহ কিছু সংখ্যক পুলিশ আগে থেকেই গোবিন্দল বাজার বাসষ্ট্যান্ডে উপস্থিত ছিল। কিছুসংখ্যক মুসুল্লি এক মিছিল নিয়ে সিংগাইরের দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ বাঁধা দিলে সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এরপর মিছিল কারীগণ এদিক ওদিক ছুটা ছুটি শুরু করে। সরকার দলীয় সমর্থকগণ ও কিছু সংখ্যক লোক পুলিশের পোষাক পরিহিত অবস্থায় বিদেশী রিভলবার, চাইনিস পিস্তল দেশীয় মারাত্বক অস্ত্রসস্ত্র রামদা, ছামুরাই, চাইনিজ কুড়াল, ছেন, কিরিছ ইত্যাদি সহ ঘটনা স্থলে হাজির হয়। তারা পূর্ব পরিকল্পনামতে জয়মন্টপ, তালেবপুর, বায়রা, জামশা, শায়েস্তা, চান্দহর, ধল্লা, বলধরা ও চারিগ্রাম ইউনিয়ন এবং আজিমপুর হইতে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মীগণ বিভিন্ন প্রকার প্রাণনাশক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুলিশের ছত্রছায়ায় বিনা উস্কানিতে নিরীহ গ্রামবাসীর উপর গুলি চালায়। নিহত আলমগীর হোসেন বাসায় না ফিরলে তার স্ত্রী রাফেজা চারিগ্রাম-সিংগাইর রাস্তায় গিয়ে অনেক খোঁজাখুজি করলেও তাকে পাওয়া যায়না। পরে তার মৃত্যুর সংবাদ আসে।
অই ঘটনায় গোবিন্দল গ্রামের মাওলানা নাসির উদ্দিন, আলমগীর হোসেন, নাজিম উদ্দীন ও শাহ আলম শহীদ হয়। আহত হয় আরো অর্ধশতাধিক। সে সময় আহত ও নিহতদের পরিবার সরকারীদলের দাপটে ও পুলিশের বাধায় মামলা করতে পারেনি। ঘটনার প্রায় ১ যুগ পর মানিকগঞ্জ বিজ্ঞ জুডিশিয়াল আদালতে মামলা দায়ের করা হল।