দেশ

ভোলা সদর উপজেলা ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা

“এই ঝড়ে অহন আমার পরিবার লইয়া প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরেই ঈদ করতে পারমু”

ভোলা প্রতিনিধি :

ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত হলো দ্বীপ জেলা ভোলার সদর উপজেলা।প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে উচ্ছ্বাসিত ভূমিহীনরা। অনেকেই আবার আনন্দে কান্নায় পড়েন। ঘর পেয়ে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রীকে। এ সমস্ত পরিবারগুলো আগে থাকতে অন্যের জমিতে। এখন মাথা গোজার ঠাই পেয়েছেন।

বুধবার (২২ মার্চ) বেলা সোয়া ১১টার দিকে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সারা দেশের ন্যায় ভোলা জেলার ৬৫৩ টি ঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। একই সাথে উপকারভোগী পরিবারগুলোর কাছে জমিসহ গৃহ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি ভোলা সদর উপজেলাকেও ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন।

ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়ানে গুলি গ্রামে সবচেয়ে বড় পরিসরে ১৪১টি ঘর তৈরি করা হয়েছে। এটিই জেলার সবচেয়ে সর্ববৃহৎ আশ্রয়ন প্রকল্প। এ সময় আনুষ্ঠানিকভাবে আশ্রয়ন প্রকল্পের পাকা বাড়ি পাওয়া ভোলা সদরের পরিবারের মাঝে জমির কাগজপত্র হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক মো: তৌফিক ই-লাহী চৌধুরী।

৩য় ও ৪র্থ পর্যায়ে জেলায় ৬৫৩ টি ঘর আনুষ্ঠানিক ভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে ভোলা সদর ৯০ টি, বোরহানউদ্দিন ৫৫ টি, তজুমদ্দিনে ১৬৩ টি,লালমোহনে ১৮০ টি,চরফ্যাশনে ৯০ টি, ও মনপুরায় ৭৫ টি ঘর ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে বিতরন করা হয়েছে।

ধর পাওয়া ধনিয়া ইউনিয়নের জয়নাল হোসেন জানান, চিকিৎসা করাতে গিয়ে সব হারিয়েছেন। পঙ্গুত্ব বরন করে অভাব অনাটনে ছিলেন।আমি শহরের একটি ব্রীজে ভিক্ষা করতাম আর আমার স্ত্রী অন্যের কাছ থেকে সাহায্য তুলে সংসার চালাতেন। অন্যার বাড়িতে ভাড়া থাকতাম।এখন প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে মাথা গোজাঁর ঠাই হয়েছে। অহন খুব আরামে থাকতে পারমু, আমি এই ঝড়ে অহন আমার বউ পোলাইন লইয়া ঘরেই ঈদ কাটাতে পারমু আমার খুব আনন্দ লাগে।

শুধু জয়নাল নয় অন্যদের অবস্থাও একই। প্রত্যেকের জীবনী রয়েছে এই ধরনের ঘটনা। যারা নদী ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন কারনে নিঃস্ব। ছিলনা মাথা গোজার ঠাই।প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে ঠিকানা পেয়েছেন তারা। স্বপ্ন দেখছেন ঘুরে দাড়াঁনোর।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে জুলেখা বেগম বলেন, আগে নদীর পাড়ে থাকতাম বৃষ্টি আইলে পানি পরত। বন্যা বাতাস হইলে অনেক ডর করতো। আহন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে থাকমু অনেক আরাম হইবো। বৃষ্টির পানি আর গায়ে পরবো না।চতুর্থ দাফে ভোলায় ৫৫৩ টি এবং সদরে আরও ৯০ টি পরিবার পেয়েছেন ঘর। এর মধ্যদিয়ে সদর উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত হল সদর উপজেলা। আশ্রায়নের ঘর পেয়ে তাদের জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে বলে জানালেন উপজেলা প্রশাসনের এ কর্মকর্তা।

সহকারি কমিশনার(ভূমি) মোঃ আলী সুজা বলেন, এই ঘর বিতরণ ব্যক্তি বাছাই করার ক্ষেত্রে আমরা ছিন্ন মূল হত দরিদ্র, পঙ্গু, প্রতিবন্ধিওবন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধেঁর উপরে থাকা ভূমিহীনদের বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ”বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহীন থাকবে না”- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের সকল জেলার মতো আজ ভোলার ৭ উপজেলার বাস্তুহারা, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষদেরকে ৬৫৩টি ঘরের চাবি ও জমির কাগজপত্র হস্তান্তর করা হয়। একই সাথে ভোলাকে ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হয়।

ভোলা জেলায় প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপ মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৪৪৯ টি হাজার ঘরের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে২৮৮৩ টি ঘর নির্মান করে ইতিমধ্যে উপকারভোগীদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।

ভোলা জেলা প্রশাসক মো: তৌফিক ই-লাহী চৌধুরী জানান, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ প্রকল্পসহ ভোলার “ক” শ্রেণির অর্ন্তভুক্ত ২৮৮৩ টি ঘর ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর দেওয়া হয়েছে। সরকারি এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে করতে অবৈধ ভূমি দখলমুক্ত করে পরিকল্পনা অনুযায়ী আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। দারিদ্র বিমোচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মডেলের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখানে কর্মসংস্থানের সুবিধা, মসজিদ, কবরস্থান, কমিউনিটি সেন্টার পর্যায়ক্রমে গড়ে তোলা হবে। এ আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের ভেতর পূর্ণাঙ্গ এক শহর গড়ে উঠছে বলে জানান।

এ প্রকল্পের প্রতিটি ঘর তৈরিতে সরকারিভাবে ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: তৌহিদুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন ভোলা জেলা পুলিশ সুপার মো: সাইফুল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মমিন টুলু, ভোলা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু, ভোলা জেলা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ইব্রাহীম খলীল,জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক জহিরুল ইসলাম নকীব,জেলা পরিষদ এর প্যানেল চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম গোলদার, ভোলা সদর উপজেলার ভাইসচেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ, ভোলা জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, ভোলা জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সেক্রেটারী মো: আজিজুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সঞ্চলনা করেন তালহা তালুকদার বাধঁন।

এসময় জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button