জাতীয়

ব্রিকসকে বহুমুখী বিশ্বের বাতিঘর হিসাবে আবির্ভূত হতে হবে: প্রধানমন্ত্রী 

সময়ের চিত্র ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ব্রিকসকে বহুমুখী বিশ্বের বাতিঘর হিসাবে আবির্ভূত হতে হবে এবং প্রতিক্রিয়ার সময় অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম হতে হব।

 

প্রধানমন্ত্রী জোহানেসবার্গের স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে ৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে ফ্রেন্ডস অব ব্রিকস লিডারস ডায়ালগ (ব্রিকস-আফ্রিকা আউটরিচ অ্যান্ড দ্য ব্রিকস প্লাস ডায়ালগ) ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ব্রিকস’-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ভাষণ প্রদানকালে একথা বলেন।

 

 

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসাও এ সংলাপে বক্তব্য দেন। ব্রিকস প্লাস ডায়ালগের ফাঁকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসি ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস, উগান্ডার ভাইস-প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার উপ-প্রধানমন্ত্রী, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুশল বিনিময় করেন।

 

গ্লোবাল সাউথ-এ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া তথাকথিত পছন্দ ও বিভাজনকে ‘না’ বলা উচিত। সার্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করতে হবে।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান ব্রিকস চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আমন্ত্রণে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ২২ আগস্ট জোহানেসবার্গে পৌঁছেছেন।

 

দক্ষিণ আফ্রিকা ব্রিকস দেশগুলোর ঐতিহাসিক ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করেছে। এর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে- ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা।

 

ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

 

ইউএনজিএ-তে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উদীয়মান বিশ্বে আমাদের জন্য, আমাদের ভাগ্য ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে আমাদের নিজেদের সামর্থ্যের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।

তিনি (বঙ্গবন্ধু) পঞ্চাশ বছর আগে যে বার্তা দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তা এখনও সত্য বলে মনে করেন ।

 

প্রধানমন্ত্রী রামাপোসাকে তার আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রেসিডেন্ট ম্যান্ডেলার স্নেহ ও আশীর্বাদ উপভোগ করার জন্য আমি দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ব্যক্তিগত সংযুক্তি অনুভব করছি। আমি ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২৫তম বার্ষিকীতে আমাদের উদযাপনে তার যোগদানের কথা স্মরণ করছি।

 

ম্যান্ডেলার মতো, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জাতির জন্য ত্যাগের জীবন যাপন করতেন, তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করতে তিনি ১৩ বছরেরও বেশি সময় কারাগারে কাটিয়েছেন।

তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু বর্ণবাদকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে নিন্দা করেন এবং জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া ও ফিলিস্তিনকে উপনিবেশমুক্ত করার আহ্বান জানান।

 

বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়নে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি।

তিনি বলেন, আমরা ২০০৬ সালে ৪১.৫% থেকে দারিদ্র্য কমিয়ে ২০২২ সালে ১৮.৭% এ নিয়ে এসেছি। আমরা একই সময়ে চরম দারিদ্র্য ২৫.১% থেকে ৫.৬% কমিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার সারা দেশে ডিজিটাল গণ অবকাঠামো তৈরি করেছে। আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ১০৮% সেলুলার মোবাইল সংযোগে অ্যাক্সেস আছে, যা বিশ্বব্যাপী গড় থেকে বেশি। গত অর্থবছরে, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সিস্টেমস ১১১.২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লেনদেন রেকর্ড করেছে। এতে অন্যদের সঙ্গে আমাদের গ্রামীণ মহিলারা ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে।

 

তিনি বলেন, গত সপ্তাহে, আমরা ১০০ মিলিয়ন মানুষের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি, যেখানে সমস্ত লেনদেন অনলাইনে হয়। সরকারি কর্মীরা পেনশন সুবিধা ভোগ করে। আমাদের সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য হল ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’’ গড়ে তোলা।

 

 

বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে চ্যাম্পিয়ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায়- নিয়োজিত থাকতে পেরে বাংলাদেশ গর্ববোধ বোধ করে। আফ্রিকায় শরণার্থী-আশ্রয়দানকারী দেশগুলো এর ভার বুঝতে পারেন।

 

তিনি বলেন, আমরা মহাদেশের সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন, সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের বিষয়ে আমাদের দক্ষতা ভাগ করে নিতে প্রস্তুত। আমরা সন্ত্রাসবাদ, মানব পাচার, সাইবার-অপরাধ এবং মানি লন্ডারিং মোকাবেলায় সহযোগিতা বাড়াতে পারি। পারস্পরিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে উন্নীত করার জন্য আমাদের আকাশ ও সামুদ্রিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

 

প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিনমোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র: বাসস।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button