
আল সাদি, গাজীপুর: গাজীপুরে রবিউল ইসলাম নামের এক গার্মেন্টস কর্মীকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনার সাথে জড়িত তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
উক্ত ঘটনার ১৬ মাস পর তিনজনকে সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে কাশিমপুর থানার পূর্ব এনায়েতপুর সবুজ কানন বাজার এলাকা থেকে আটক করে করে পিবিআই।
মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) তাদের গাজীপুর মহানগর হাকিম আদালতে উপস্থাপন করা হলে বিচারক মো. ইকবাল হোসেনের কাছে তারা জবানবন্দি দেন বলে জানান গাজীপুর পিবিআইয়ের এসআই মো. সজিবুল হাসান।
গ্রেফতার তিনজন হলেন- পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সোহেল হাওলাদার (২৭), বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পাঠানপাড়া এলাকার মো. রতন মিয়া (২৫) এবং একই এলাকার ইস্রাফিল প্রামাণিক (৪০)।
নিহত রবিউল (২০) বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা দিগদাইড় এলাকার ইমদাদুল হকের ছেলে। তার মা-বাবা কাশিমপুরের এনায়েতপুর এলাকায় ভাড়া থাকেন।
মামলা সূত্রে পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সজিবুল জানান, রবিউল তার ভাড়া বাসা সংলগ্ন একটি গ্যারেজে মাঝে-মধ্যেই রাতে মোবাইলে ওয়াইফাই চালাতেন। ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে মা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর রবিউল সেখানে যান। রাত সাড়ে ৩টার দিকে মায়ের ঘুম ভাঙে। তখন তিনি গ্যারেজে গিয়ে বাঁশের আঁড়ার সঙ্গে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় রবিউলকে দেখতে পান।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রবিউলের ময়নাতদন্ত শেষে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় রবিউলের মা মোসা. হামিদা খাতুন কাশিমপুর থানার একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন।
২০২১ সালের ২০ জুন রবিউলের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে পুলিশের কাছে। সেখানে রবিউলকে খুন করা হয়েছে বলে মতামত দেন চিকিৎসক। এরপর অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন কাশিমপুর থানার এসআই মোশারফ হোসেন।
১০ মাস তদন্ত করে খুনের মূল রহস্য উদ্ঘাটন বা আসামি শনাক্ত করতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা। এই অবস্থাতেই তিনি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। তখন আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০২২ সালের ৩ অগাস্ট পিবিআই মামলার তদন্ত শুরু করে।
এসআই সজিবুল বলেন, রবিউল এবং একজন আসামি পাশাপাশি বাড়িতে থাকতেন। সেই আসামির বিবাহিত বোনকে রবিউল উত্ত্যক্ত করতেন। এ নিয়ে দুই পরিবারে বাদানুবাদও হয়। নিষেধ করার পরও রবিউল উত্ত্যক্ত করা বন্ধ করেনি। তারপর রবিউলকে খুন করার পরিকল্পনা করেন আসামিরা।
তিনি আরও বলেন, এজন্য আসামিরা সবুজ কানন কাঁচা বাজারের একটি দোকান থেকে রশি কিনেন। ঘটনার দিন রাত ১২টায় গিয়ে তারা রবিউলকে গ্যারেজে পায়। তখন রবিউলকে গলায় রশি পেঁচিয়ে তারা মারপিট করেন; একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে রবিউলকে গ্যারেজের আঁড়ার সঙ্গে রশি বেঁধে ঝুলিয়ে আসামিরা চলে যায়।