বিটিএ নেতা কাওছারের দুর্নীতি আপিল কমিটিতে প্রমাণিত

সময়ের চিত্র ডেস্ক: কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি, জাল সনদের মাধ্যমে নিজ আত্মীয়কে নিয়োগ প্রদান, এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়ে অর্থ আদায়, প্রতিষ্ঠানের কাজে সময় না দিয়ে জমি ব্যবসায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা, প্রধান শিক্ষক হয়েও অধ্যক্ষ পদ ব্যবহার করাসহ একাধিক অভিযোগে রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ীর সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ কাওছার আলী শেখকে ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক চুড়ান্ত বরখাস্ত অনুমোদন করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আপীল এন্ড আরবিট্রেশন কমিটি। প্রধান শিক্ষক হয়েও অধ্যক্ষ দাবি করা প্রধান শিক্ষক মোঃ কাওছার আলী শেখ বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।

রবিবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর আজাদ হোসেন চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চুড়ান্ত বরখাস্ত অনুমোদন করে।

বিজ্ঞপ্ততিতে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (বরখাস্তকৃত)  মো. কাওছার আলী শেখ-এর বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক আনীত অভিযোগ সাহিদা পারভীনকে এমপিওভূক্ত করার প্রলোভন দেখিয়ে দাবীকৃত ৬,০০,০০০/- (ছয় লক্ষ) টাকার মধ্যে ৪,৫০,০০০/- (চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা নগদ আত্মসাৎ। ২০২০ সালে করোনা অতিমারীর সময় শিক্ষকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের ১,৯৮,০০০/- (এক লক্ষ আটানব্বই হাজার) টাকা নগদ আত্মসাৎ, `জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোং‍‍` ফার্মের অডিটে ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যাবতীয় তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনে ব্যর্থ:  আয়ের খাতে ১.৪২,০৭,৪৮৯/- (এক কোটি বিয়াল্লিশ লক্ষ সাত হাজার চারশত উননব্বই) টাকা নগদ অসঙ্গতি। ব্যয়ের খাতে ১,৪৩,৪৭,২৫০/- (এক কোটি তেতাল্লিশ লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার দুইশত পঞ্চাশ) টাকা অসঙ্গতি;  ২০১৬ সালে জাল সনদ ও খাতা টেম্পারিং এর মাধ্যমে নিজ আত্মীয় হোসেন শেখকে নিয়োগ নতুন কারিকুলামের ব্যাপারে অসহযোগীতাবিদ্যালয়ে সময় না দিয়ে ব্যবসায় ও শিক্ষক রাজনীতিতে সরব অংশগ্রহন  বিধিবর্হিভূতভাবে অধ্যক্ষ পদবী ব্যবহার রেজুলেশন বহি, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথি নিজ জিম্মায় রাখা।

এমতাবস্থায়, বোর্ডের আপিল এন্ড আরবিট্রেশন কমিটির ২৮/০৩/২০২৪ তারিখের সভায় বাদী ও বিবাদী উভয়ের উপস্থিতিতে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ এবং অভিযোগসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণপূর্বক ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত বরখাস্তের বিষয়টি প্রমাণিত হয় বিধায় তাঁকে চাকুরি হতে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। গত ০৪/০৪/২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত ২৩০ তম বোর্ড সভায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (বরখাস্তকৃত) জনাব মো: কাওছার আলী শেখ-এর চূড়ান্ত বরখাস্তকরণের বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির গৃহীত সিদ্ধান্তটি অনুমোদন প্রদান করা হয়।

গত বছর মাধ্যমিক শিক্ষকদের জাতীয়করণ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখাকে পূঁজি করে শিক্ষক নেতা মো. কাওছার আলী শেখ নিজের দুর্নীতির বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তার চুড়ান্ত বরখাস্তের প্রতিবাদে কিছু শিক্ষককে রাজপথে আন্দোলনে নামান। নিজের আর্থিক জালিয়াতির বিষয়কে জাতীয়করণ আন্দোলন করার ফলে রোষানলের স্বীকার দাবি করে কতিপয় শিক্ষককে রাজপথে নামিয়ে আন্দোলন করেন তিনি। তবে শিক্ষকরা আন্দোলনের উদ্দেশ্য বুঝতে পারলে এই আন্দোলন আর বেশি দূর এগোতে পারেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন কাওছার শেখ। একাধিক বাড়ি করার পাশাপাশি বিলাসিতার জন্য কিনেছেন দামি গাড়িও। হয়েছেন একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক। এসব বিষয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী আবুল কালাম অনু। অভিযোগপত্রে কমিটির ৮ সদস্যের স্বাক্ষর রয়েছে।

জানা গেছে, ২০১১ সালে বিদ্যালয়টির তৎকালীন প্রধান শিক্ষক অবসরে গেলে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পান বিদ্যালয়টির তৎকালীন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক তাসলিমা বেগম। ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বকালীন সময়ে তিনি হজে গেলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান মোঃ কাওছার শেখ। এরপর হজ থেকে তাসলিমা বেগম ফেরত আসার আগেই তিনি নিজেই প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাগিয়ে নেন। আর এই প্রধান শিক্ষক পদে বসেই শুরু করেন অনিয়ম দুর্নীতি। জিরো থেকে বনে যান হিরো, গড়েন অঢেল সম্পদ বাড়ী-গাড়ী, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ।

এই বিভাগের আরো খবর