খেলাধুলা

বাংলাদেশের রোমাঞ্চ ছড়ানো জয়

খেলাধুলা ডেস্ক:

অ্যান্ডু বালবির্নি-পল স্টার্লিংয়ের শতাধিক রানের জুটির পর বাংলাদেশকে অস্বস্তি দিচ্ছিলেন হ্যারি টেক্টর-লরকান টকার। ফিফটির জুটি পেরিয়ে ছুটছিল শতারানের দিকে। অগত্যা অধিনায়ক তামিম ইকবাল বোলিংয়ে নিয়ে আসলেন ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্তকে। আউটসাইড অফের শর্ট বলে টেক্টর উড়িয়ে মারলেন, লং অনে ধরা পড়লেন লিটনের হাতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শান্তর প্রথম উইকেটে বদলে দেয় ম্যাচের রং।

৬৫ বলে ৭৯ রানের জুটি ভেঙে শান্তর ব্রেক থ্রুর পর আইরিশদের এক প্রকার ধসিয়ে দেন এই ম্যাচেই দলে ফেরা মোস্তাফিজুর রহমান। টানা ৩ ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নাটাই নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন। তবুও মার্ক অ্যাডেয়ার ১০ বলে ২০ রানের ক্যামিওতে দিচ্ছিলেন হুমকি। শেষ ওভারে যখন ১০ প্রয়োজন তখন হাসান মাহমুদ প্রথম বলেই অসাধারাণ স্লোয়ারে বোল্ড করেন অ্যাডেয়ারকে। ১ বল পর আবার স্লোয়ার, এবার পরাস্ত ম্যাকব্রিন। আয়ারল্যান্ড শেষ পর্যন্ত নিতে পারে ৫ রান। শ্বাসরুদ্ধকর এই ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পায় ৪ রানে। ২-০ ব্যবধানের জয়ে সিরিজ নিজেদের পকেটে পুরে নেয় তামিমের দল। সিরিজের প্রথম ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল।

রোববার ক্লাউড কাউন্টি গ্রাউন্ডে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ ২৭৪ রানে অলআউট হয়। রান তাড়া করতে নেমে মোস্তাফিজ-হাসানের যুগলবন্দি আক্রমণে আয়ারল্যান্ড থামে ৯ উইকেটে ২৭০ রানে। নিজের ফিরতি ম্যাচে ৪৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন মোস্তাফিজ। ব্যাট হাতে ১ সেঞ্চুরিসহ ১৯৬ রান ও বল হাতে ১ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা হন শান্ত।

রান তাড়া করতে নেমে শুরুতে স্টিফেন দোহনির আউটের ধাক্কা সামলে সাবলীলভাবেই এগোচ্ছিলো আয়ারল্যান্ড। বালবির্নি-স্টার্লিং জুটি গড়ে যোগ করেন ১২৫ রান। দুজনেই ফিফটি করেন। বালবির্নি ৫৩, স্টার্লিং ফেরেন ৬০ রান। দুজন সাজঘরে ফিরলে হাল ধরেন টেক্টর-টকার। তাদের যখন নিয়মিত বোলাররা থামাতে পারছিলেন না তখন তামিম কাজে লাগান শান্ত ম্যাজিক। বাকি কাজটা সেরে দেন মোস্তাফিজ-হাসান। অসাধারণ এক ক্যাচ ধরেন বদলি নামা ইয়াসির আলি রাব্বি। টেক্টর ৪৫ ও টকার ৫৩ রান করেন।

মোস্তাফিজের ৪ উইকেট ছাড়া সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন হাসান। তিনি ৯ ওভারে ৪৪ রান দেন। এ ছাড়া ১টি করে উইকেট নেন ইবাদত, মেহেদি হাসান মিরাজ ও শান্ত। ৩ ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে উইকেটটি নেন শান্ত। অভিষিক্ত মৃত্যুঞ্জয় ছিলেন এলোমেলো, ৮ ওভারে ৬৪ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট শুন্য।

এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই ফেরেন অভিষিক্ত রনি তালুকদার (৪)। তামিম-শান্ত ম্যাচের হাল ধরে এগিয়ে নিতে থাকেন। শান্ত ৩৫ রান করে সাজঘরে ফিরলে ভাঙে ৪৯ রানের জুটি। শান্তর পর লিটনও এসে ৩৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন। হৃদয়ের ব্যাট কথা বলেনি আজ। ৮ রান করেন তিনি। ৬১ বলে ফিফটির পর তামিম নিজেও থেমে যান ৬৯ রানে। ৮২ বলে এই ইনিংসটি খেলেন ওয়ানডে অধিনায়ক। তামিমের বিদায়ের পর এগিয়ে নিতে থাকেন মুশফিক-মিরাজ। দুজনে ৭২ বলে যোগ করেন ৭৬ রান। ৫৪ বলে ৪৫ রান করে মুশফিক আউট হতেই ছন্দপতন ঘটে। ম্যাকব্রিনকে স্লগ সুইপ করতে চেয়েছিলেন মুশফিক। মিস টাইমিং। ব্যাট ফাঁকি দিয়ে বল লাগে প্যাডে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। মুশফিক রিভিউ নিলেও আম্পায়ার্স কল হওয়াতে আউটের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। মুশফিকের এই আউটের পর বাংলাদেশ মাত্র ১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়।

আইরিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন অ্যাডেয়ার। এ ছাড়া ম্যাকব্রিন-ডকরেলের ঝুলিতে জমা হয় ২টি করে উইকেট।

সিরিজটি আইরিশদের জন্য ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ার পরই তাদের সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নের ইতি ঘটে। শেষ দুই ম্যাচ জিতে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয় স্থানে। অন্যদিকে আইরিশদের বাছাই খেলে ধরতে হবে বিশ্বকাপের বিমান।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button