জাতীয়

পার্বত্য অঞ্চলের কৃষি দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটাবে- পার্বত্য মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন, কাজু বাদাম, কফি চাষ, মিশ্র ফল চাষ, ইক্ষু চাষ, তুলা চাষের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকার কৃষকরা পার্বত্য অঞ্চল তথা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার আমুল পরিবর্তন ঘটাবে। মন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী পার্বত্য অঞ্চলের এক ইঞ্চি আবাদযোগ্য ভূমি ফাঁকা রাখা হবে না। পার্বত্য অঞ্চলের কৃষি দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটানোর দিকে এগুচ্ছে।

 

রোববার বাংলাদেশ সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর এসব কথা বলেন। কেক কাটার মধ্য দিয়েপার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।

 

মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ, সুদূরপ্রসারী ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ১৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। মন্ত্রী বলেন, সবাই শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন চায়। সরকার শান্তিচুক্তির সকল ধারা বাস্তবায়নে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে অঙ্গিকারাবদ্ধ।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বীর বাহাদুর আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন হওয়ার পর থেকে বিগত ২৫ বছর যাবৎ পার্বত্য জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও বিদেশী দাতা সংস্থার সাথে সমন্বয় করে পার্বত্য তিন জেলার মানুষের জীবন মান উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ এবং সক্রিয়ভাবে তা বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পার্বত্য অঞ্চলের কৃষি, খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য-পুষ্টি, বাসস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণসহ সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম অত্যন্ত স্বার্থকতার সাথে পরিচালনা করে আসছে।

 

পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার মানোন্নয়ন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছা ও আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা যার বড় উদাহরণ। বান্দরবান পার্বত্য জেলায় উচ্চশিক্ষা লাভে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠেছে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। বান্দরবানের দুর্গম এলাকা থানচি উপজেলায় খুব সহজে পর্যটকরা এখন যাতায়াত করতে পারছেন। বান্দরবান পার্বত্য জেলার রোয়াংছড়ি উপজেলা হতে রুমা উপজেলা পল্লী সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। মন্ত্রী আরও বলেন, খাগড়াছড়ি জেলা সদরে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে মাস্টার ড্রেইন নির্মাণ এবং দুর্গম এলাকাগুলোতে কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক স্থাপন ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত করা হচ্ছে। পার্বত্য এলাকার ২৫ বছরের উন্নয়নের ফিরিস্তি টেনে মন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, পাহাড়ের দুর্গম এলাকার অধিবাসীরা এখন অন্ধকারমুক্ত। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার সোলার প্যানেলের উৎপাদিত বিদ্যুতের মাধ্যমে দুর্গম পাহাড়ের মানুষ এখন নির্বিঘ্নে সর্বত্র নেটওয়ার্ক সেবা প্রাপ্তিসহ টিভি, মোবাইল, ফ্যান অনায়াসে চালাতে পারছে । দুর্গম পাহাড়ি এলাকার পাড়া কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ ৩ লাখ সাধারণ মানুষ সোলার প্যানেল বিদ্যুতের আওতায় এসেছে।

 

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) অতিরিক্ত সচিব মো. আমিনুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার মহোত্তম এনডিসি, যুগ্মসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এনডিসি, যুগ্মসচিব মো. হুজুর আলী, ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য মো. জসীম উদ্দিন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা টীটন খীসা, তিন পার্বত্য জেলার বিশেষ প্রতিনিধি ড. অজয় প্রকাশ চাকমা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ব্র্যাকের পক্ষে সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শাখাওয়াতুল ইসলাম ও পদক্ষেপ এর সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button