দেশ

পাঁচিশ কিলোমিটারব্যাপী ঢেপা নদীর দু’কুলে  লাখ লাখ ভক্ত, পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর ভীড়

নৌ-পথে কান্তনগর মন্দির থেকে কান্তজী বিগ্রহ এসে পৌচেছে দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ীতে

দিনাজপুর প্রতিনিধি :
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার কান্তজীউ নদীর ঘাট থেকে দিনাজপুর শহরের কোল ঘেষা সাধুর ঘাট। ঢেপা নদীর এই ২৫ কিলোমিটারব্যাপী নদীর দু’কূলে কেথাও যেনো তিল ধারনের ঠাই ছিলো না। তীব্র রোদ উপেক্ষা করেই ভীড় করছিলো লাখ লাখ মানুষ। কান্তজীউ বিগ্রহের নৌ-ভ্রমণ উপলক্ষে গতকাল সোমবার লাখো ভক্ত, পুণ্যার্থী আর দর্শনার্থীর পদভারে মুখরিত ছিলো ঢেপা নদীর এই ২৫ কিলোমিটারব্যপী দু’কুল।
আড়াই শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য ও রাজ পরিবারের প্রথা অনুযায়ী দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী কান্তনগর মন্দির হতে শ্রী শ্রী কান্তজীউ বিগ্রহ গতকাল সোমবার দীর্ঘ নদীপথ পাড়ি দিয়ে দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ীতে নিয়ে আসা হয়। সনাতন ধর্মালম্বীদের ভগবান শ্রী কৃষ্ণের আরেক রূপ কান্তজীউ বিগ্রহ নিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে ঢেপা নদীর দু’তীরে ২৫ কিলোমিটার নদীপথে লাখ লাখ ভক্ত-পূণ্যার্থীর ভীড়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উৎসবের আমেজে পরিণত হয়। আনন্দমন ও ভক্তিভাবে ভগবানকে পুস্প, ফল-ফলাদিসহ বিভিন্ন অর্পন করতে আসা ভক্ত-পূণ্যার্থীরা জানায়, মনবাসনা পূর্ণ ও পাপ মোচন তথা পূণ্য অর্জন করতে তাদের আগমন।
দিনাজপুর রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৫শ’ বছর আগে। সেই বংশের রাজা প্রাণনাথ ১৭২২ সালে দিনাজপুর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তরে কাহারোল উপজেলার কান্তনগর এলাকায় কান্তজিউ মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৭৫২ সালে এই মন্দিরের কাজ শেষ করেন তার পোষ্যপুত্র রামনাথ। সেই সময় থেকেই কান্তজীউ বিগ্রহ ৯ মাস কান্তনগর মন্দিরে এবং ৩ মাস দিনাজপুরের শহরের রাজবাড়ীতে অবস্থান করেন। জন্মাষ্ঠমীর দু’দিন আগে কান্তজীউ বিগ্রহ ধর্মীয় উৎসব-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনাজপুরে নিয়ে আসা হয়।
সেই রীতি অনুযায়ী গতকাল সোমবার সকাল ৮ টায় ঐতিহ্যবাহী কান্তনগর মন্দির হতে পূজা অর্চনা শেষে শ্রী শ্রী কান্তজীউ বিগ্রহ ঢেপা নদীর কান্তনগর ঘাটে আনা হয়। সেখান থেকে বিশাল নৌবহর নিয়ে যাত্রা শুরু হয় দিনাজপুর শহরের সাধুঘাটের উদ্দেশ্যে। দীর্ঘ প্রায় ২৫ কিলোমিটার নদীপথে কান্তনগর ঘাট থেকে দিনাজপুর শহরের সাধুরঘাট পর্যন্ত ঢেপা নদীর শতাধিক ঘাটে কান্তজীউ বিগ্রহ বহনকারী নৌকা ভেড়ানো হয়। নৌকাযোগে দিনাজপুর আসার সময় হিন্দু ধর্মালম্বী হাজার হাজার ভক্ত ও পুণ্যার্থী নদীর দু’কুলে কান্তজীউ বিগ্রহকে দর্শন এবং বাড়ীর বিভিন্ন ফল, দুধ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদী নিয়ে শ্রী শ্রী কান্তজীউ বিগ্রহকে উৎসর্গ করার জন্য নিয়ে আসে। এসময় নদীর দু’কূল সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্যদের ভীড়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। দীর্ঘ ২৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদীর দু’কুলে পুস্প, ফল-ফলাদি ও প্রসাদ অর্পনের জন্য আসা ভক্ত-পূণ্যার্থীরা জানায়, এখানে আসলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়। পরিবারের সুখ-শান্তির কামনায় এসেছেন তারা। আবার অনেকে এসেছেন সন্তানদের মঙ্গল কামনায়। তাদের বিশ্বাস এখানে আসলে ভগবান তাদের মনের বাসনা পূর্ণ করবেন।
প্রতিবছরই এই কান্তজীউ বিগ্রহকে নিয়ে এই নৌ-বিহারের আয়োজন করে থাকে দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেট কমিটি। দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেট এর এজেন্ট রনজিৎ সিংহ জানান, আড়াইশ বছর প্রাচীন কাল থেকেই কান্তজীউ বিগ্রহ দিনাজপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজ পরিবারের রীতি অনুযায়ী কান্তজীউ বিগ্রহ ৯ মাস কান্তনগর মন্দিরে এবং ৩ মাস দিনাজপুরের শহরের রাজবাড়ীতে অবস্থান করেন। তাদের মতে, ভগবান কান্তজীউয়ের শ্বশুরবাড়ী দিনাজপুরের রাজবাড়ী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button