
বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি পুরোপুরি পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হয়েছে। বিষয়টি ভিন্ন খাতে রুপ দেয়ার জন্য চুরির ঘটনা সাজানো হয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
বরিশালের বাবুগঞ্জের কেদারপুরে একই রাতে ইউপি সদস্যের মা ও ছেলের বউয়ের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও মৃত ওই ইউপি সদস্যের স্ত্রীকে মুমূর্ষূ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে স্থানীয়রা।
স্বজন ও স্থানীয়রা বলছে, চুরি করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে খাবারের সঙ্গে বিষাক্তদ্রব্য মিশিয়ে তাদের কিছু খাওয়ানো হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য চুরির মতো একটি ঘটনার রুপ দেয়ার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। যদিও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে এখন পর্যন্ত আটক করা হয়নি।
মৃত ১০২ বছর বয়সী লালমুন নেছা বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মৃত দেলোয়ার হোসেনের মা। ২০ বছর বয়সী রিপা আক্তার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সোলায়ামানের স্ত্রী। গুরুতর অসুস্থ মিনার বেগমকে স্থানীয় বাহেরচর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাবুগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অলিউল ইসলাম বৃহস্পতিবার সকালে নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বুধবার রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক থেকে দেড়শ গজ দূরে ঘটনাস্থল। তবে আমরা গিয়ে ঘটনাস্থলে কাউকে পাইনি, তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। হাসপাতালে নেয়ার পর লালমুন নেছা ও রিপা আক্তারকে মৃত ঘোষণা করা হয়, মিনারা বেগম হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
স্থানীয়দের বরাতে তিনি জানান, বুধবার রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিবেশী এক নারী টয়লেটে যেতে ঘর থেকে বের হন। তখন তিনি বাড়ির মধ্যে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির অবস্থান দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করেন। তবে ওই ব্যক্তি কোনো উত্তর না দিলে ওই নারী ঘরের ভেতর থেকে টর্চলাইট আনতে যান। ফিরে এসে ওই ব্যক্তিকে আর না পেয়ে নিজেদের গোয়ালঘরের দিকে যান তিনি।
সেখানে গিয়ে গরুসহ সবকিছু ঠিকভাবে দেখতে পান। পরে ঘরে ফেরার সময় সাবেক ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের ঘরের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু ঘরের ভেতর থেকে কোনো সারাশব্দ না আসায় তিনি ভয়ে ডাক চিৎকার দিলে আশপাশের বাড়ির লোকজনও সেখানে জড়ো হন।
পরে স্থানীয়রা মিলে ঘরের ভেতর গিয়ে তিন নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং পুলিশে খবর দেয়।
এদিকে স্থানীয় গ্রাম পুলিশের দফাদার মো. হানিফ জানান, কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ ভূতেরদিয়া এলাকার এই ঘটনা পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সকাল থেকে বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনও ভিড় করেছেন।
তিনি বলেন, ‘রাতে এ বাড়িতে দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী, মা ও ছেলের বউ ছাড়া কেউ ছিলেন না। কেউ সন্দেহ করছে চুরির জন্য খাবারের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে এই পরিবারের তিনজনকে অচেতন করা হয়েছিল। আর সেই বিষক্রিয়া বেশি হওয়ায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে, বাকি একজন অচেতন হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়। তবে সার্বিক আলামত দেখে চুরির জন্য নয়, হত্যাকাণ্ডের জন্যই এমনটা করা হয়েছে তাও সন্দেহ করছেন অনেকে।’
তিনি বলেন, ‘ঘরের এক পাশে একটি ছোট আকারের সিঁদ কাটা হয়েছে, তবে সেটি দিয়ে কোনো মানুষের চলাচল সম্ভব নয়। আর পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে যেটুকু জেনেছি তাতে কিছু স্বর্নালংকারসহ অল্প কিছু মালামাল খোয়া গেছে। এক্ষেত্রে চুরি হলে আরও অনেক মালামালই তো খোয়া যেত।’
কেদারপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহিম জানান, ওই বাড়িতে চারটি ঘর রয়েছে। তাদের মধ্যে তিনটি ঘরে লোক থাকে। আরেকটি ঘর তালাবদ্ধ। তিনটি ঘরে কোনো পুরুষ ছিল না।
ইব্রাহিম বলেন, ‘দেলোয়ার মেম্বর জীবদ্দশায় একজনের কাছে জমি বিক্রি করার কথা বলে টাকা নিয়েছিল। কিন্তু জমির দলিল দিতে পারেননি। তার উত্তরাধিকার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে বুধবার ওই জমির দলিল দিয়েছেন। জমির দলিল দিলেও তারা কোনো টাকা পাননি।’
তিনি আরও জানান, জমির দলিল দেয়ার পর সোলেমান বরিশাল নগরীর কর্মস্থলে ও মেয়ে স্বামীর বাড়িতে ফিরে গেছে। তাই ঘরে দেলোয়ারের মা, স্ত্রী ও ছেলের বউ ছিল।
ইউপি সদস্য বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে জমির দলিল দেয়ায় দুর্বৃত্তরা বুঝেছিল ঘরে টাকা রয়েছে। তাই হয়তো খাবার অথবা পানির সঙ্গে বিষ মিশিয়ে রেখেছিল। সেই খাবার খেয়ে তিন নারী অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাতে তারা সিঁদ কেটে ঘরে প্রবেশ করেছে।’
সকালে বাবুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি পুরোপুরি পরিকল্পিত একটি হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হয়েছে। বিষয়টি ভিন্ন খাতে রুপ দেয়ার জন্য চুরির ঘটনা সাজানো হয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’