নিজে দোষ করে বন্ধুকে ফাঁসিয়ে দিলেন উপসচিব সাইফুল
#প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ভুক্তভোগীর আবেদন #শাস্তির সুপারিশ থেকে অব্যাহতি চান উপসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ডিসি নিয়োগে হাতাহাতি ঘটনায় প্রকৃত দোষী ব্যক্তি নিজেকে বাঁচাতে নিরপরাধ বন্ধুকে ফাঁসিয়ে দিলেন উপসচিব সাইফুল ইসলাম। প্রকৃত দোষী সাইফুল ইসলামের আইডি হল ৮০৬ অর্থাৎ ১৫৮০৬ তিনি আইএমইডির পরিচালক ছিলেন। এসিল্যান্ড থাকাকালীন সময়ে অনিয়মের দায়ে তার পদাবনতি হয় আর এটাকে তিনি বঞ্চিত হিসেবে পুঁজি করে বসেছিলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৫ আগস্টের পরে এই সাইফুল ইসলাম নিজেকে বঞ্চিত উল্লেখ করে উপসচিব পদে পদোন্নতি পান এবং পাশাপাশি যে কোন জেলার ডিসি হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগেন। বর্তমান সরকার তাকে ডিসি না করলে অন্যদের সাথে তিনিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিক্ষুব্ধ ও উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ শুরু করেন। জনপ্রশাসনের বিশৃঙ্খলার সেই ভিডিওতে তার ছবি দেখা গেছে। ছবি দেখে জনপ্রশাসনের শৃঙ্খলা কমিটি সাইফুল ইসলামকে তলব করলে জনপ্রশাসনের তদন্ত কমিটির কাছে সাইফুল ইসলাম নিজের নাম পরিচয় গোপন রেখে অন্য একজনের নাম এবং আইডি নাম্বার বলে দেন। সে অনুযায়ী নির্দোষ সাইফুল হাসান শাস্তির আওতায় পড়ে যান। গতকাল সাইফুল হাসান বিষয়টি জনপ্রশাসন সচিবকে জানায় লিখিতভাবে জানিয়ে এর প্রতিকার চেয়েছেন।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও তদন্তকারী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদনে ডিসি নিয়োগে হাতাহাতি ঘটনায় প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ এবং নিরপরাধ ব্যক্তিকে অব্যহতি চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি মোহাম্মদ সাইফুল হাসান পরিচিতি নম্বর ১৫৭০১, উপসচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ২ অক্টোবর ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানতে পারি, ডিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে গত ১০ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় তলায় যুগ্মসচিব (মাঠ প্রশাসন) রুমে হাতাহাতি ঘটনায় ১৭ জন উপসচিবকে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। উক্ত ঘটনায় দোষ নির্ধারণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব স্যারকে তদন্ত করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেয়ার জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ৮ জন উপসচিবকে গুরুদন্ড প্রদানের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। যার মধ্যে মো সাইফুল হাসানের নাম। উল্লেখ রয়েছে। আমি এজন্য উদ্বিগ্ন এবং চিন্তিত।
প্রকৃত পক্ষে আমি উক্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না বা ঘটনার সাথে কোনভাবেই জড়িত নই। আমি তখন সরকারি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তাছাড়াও তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত কাজে আমাকে ডাকা হয়নি বা মৌখিক/লিখিত জবানবন্দী দেইনি। প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ (ভিডিও’র স্ক্রিনশট সংযুক্ত) বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, প্রায় একই নামে অন্য একজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিল। যার নাম সাইফুল ইসলাম এবং যিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট জবানবন্দী প্রদান করেছেন মর্মে জানতে পারি। আমাকে ভিডিও ফুটেজে কোথাও দেখা যায়নি। উক্ত ঘটনায় উপস্থিত আমারই ব্যাচের কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলামের নামের পরিবর্তে ভুলক্রমে মো সাইফুল হাসান-এর নাম চলে এসেছে মর্মে আমার বিশ্বাস। ফলে ঘটনার সাথে জড়িত এই নামে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে চিহ্নিতকরণ এবং নাম সংশোধন করা প্রয়োজন।
শাস্তির সুপারিশ থেকে অব্যাহতি চান উপসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন:
এদিকে ডিসি নিয়োগে সচিবালয়ে ১০ সেপ্টেম্বর হাতাহাতির ঘটনার জন্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও চিত্র দেখে প্রকৃত ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ এবং ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকার পরও শাস্তির সুপারিশ থেকে নিরপরাধ হিসেবে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন জানিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন।
গত ২ অক্টোবর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর জমা দেয়া আবেদনে তিনি বলেন, ‘ডেইলি স্টার’ পত্রিকার ২ অক্টোবর প্রকাশিত খবরে জানতে পারি, ডিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় তলায় যুগ্মসচিব (মাঠ প্রশাসন) রুমে হাতাহাতির ঘটনায় ১৭ জন উপসচিবকে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। উক্ত ঘটনায় দোষ নির্ধারণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব স্যারকে তদন্ত করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেয়ার জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী ৫ জন উপসচিবকে তিরস্কার করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। যার মধ্যে এস, এম, জাহাঙ্গীর হোসেন-এর নাম উল্লেখ রয়েছে। আমি এজন্য উদ্বিগ্ন, চিন্তিত এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
প্রকৃত পক্ষে আমি ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাতরাস্তায় অবস্থিত ভূমি ভবনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অনুবিভাগ ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চলমান প্রকল্পসমূহের প্রকল্প পরিচালকগণের সমন্বয়ে সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সভাপতিত্বে ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় ১৩৩ তম সভায় উপস্থিত ছিলাম (প্রমানক-সংযুক্ত)। উপস্থিত তালিকায় ২২ নম্বর ক্রমিকে আমার স্বাক্ষর রয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না বা ঘটনার সাথে কোনোভাবেই জড়িত নই এবং তখন সরকারি কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তাছাড়াও তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত কাজে আমাকে লিখিতভাবে ডাকা হয়নি লিখিত জবানবন্দী নেয়া হয়নি। প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজ (ভিডিওর স্ক্রিনশট সংযুক্ত) বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, আমার কোনো ছবি ছিলনা। আমাদের ব্যাচমেট মোঃ শাহীনুর আলম (১৫৫৬৩) মোবাইলে আমাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওবায়দুর রহমান স্যারের রুমে যেতে বললে স্যারের রুমে গেলে স্যার আমাকে নিয়ে অতিরিক্ত সচিব মোঃ রেজাউল মাকছুদ জাহেদী স্যারের রুমে নিয়ে গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এম. এ আকমল হোসেন আজাদ স্যার সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১০ সেপ্টেম্বর যুগ্মসচিব মাঠ প্রশাসন রুমে হাতাহাতির ঘটনা সম্পর্কে মৌখিকভাবে জিজ্ঞাসা করেন। আমি স্যারকে বলি ঘটনার সময় ভূমি মন্ত্রণালয়ের মিটিং-ছিলাম এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না বা ঘটনার সাথে কোনোভাবেই জড়িত নই। স্যার বললেন তুমি বিষয়টি লিখিতভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়-এর অতিরিক্ত সচিব ওবায়দুর রহমানকে দিয়ে যাও। আমি স্যারের কাছে লিখিত দিতে গেলে স্যার বলেন কেউ যেহেতু লিখিত দেয়নি, তোমার লিখিত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে তিরস্কার সাব্যস্তে আমার নাম রয়েছে অথচ আমার ব্যাচমেট ফোনকারী শাহীনুর আলম (১৫৫৬৩) ভিডিও ফুটেজে ছিল কিন্তু তার নাম নেই। আমার নাম পত্রিকায় দেখে বিস্মিত হয়েছি। আমাকে যড়যন্ত্র করে ফাসানো হয়েছে। আমার উপস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে হয়তবা ভুলক্রমে তিরস্কার শাস্তির প্রস্তাব এসেছে মর্মে আমার বিশ্বাস। ১০ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হাতাহাতির ঘটনায় ধারনকৃত ভিডিও চিত্র যাচাই বাছাই পূর্বক ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ এবং নিরপরাধ হিসেবে আমাকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।