নান্দাইলে নরসুন্দা নদী দখল করে পাথর ব্যবসা

শাহ্ আলম ভূঁইয়া,(ময়মনসিংহ):
কয়েক যুগ ধরে ইজারাবিহীন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদী দখল করে শত শত কোটি টাকার পাথর আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এতে বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়লেও সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

অপরদিকে, নদীতে পাথরের স্তূপ ফেলে রাখায় পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতিধারা বন্ধ হয়ে পড়েছে। পাথর সরানোর জন্য প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা কর্ণপাত করছেন না স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা।

ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে নান্দাইল উপজেলার মুশুলী ইউনিয়নের তারেরঘাট বাজার সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বাণিজ্যিকভাবে পাথর ব্যবসা। এখানে ব্যবসায়ীরা সিলেট, সুনামগঞ্জ, ছাতকসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় নৌকা দিয়ে নদীপথে পাথর আনেন। অনেকে পাথর নরসুন্দা নদীর তীরে স্তূপ করে রাখেন। কেউ কেউ রাখেন ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি ভাড়া নিয়ে। আবার কেউ কেউ রাখেন মহাসড়কের দু’পাশে থাকা সড়ক ও জনপথের জায়গায়৷ বর্ষাকালে একেকটি নৌকায় ৮ থেকে ১০ হাজার ফুট পাথর বহন করে এখানে নিয়ে আসা হয়। বর্ষা মৌসুমে এখানে ৫ থেকে ৬ শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। পাথর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে এখানে চালু হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখা। পাথর ব্যবসা ঘিরে প্রায় ১০০ ব্যবসায়ী নিয়ে এখানে গড়ে উঠেছে একটি পাথর ব্যবসায়ী সমিতিও।

গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন আকারের পাথর এখান থেকে সরবরাহ করা হয়। ক্রাশিং মেশিনের মাধ্যমে পাথর ভেঙে বিক্রি করা হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই পাথর ভাঙার মেশিনের (ক্রাশিং মেশিন) দেদার ব্যবহার চলছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তেমনি শব্দদূষণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

পাথর বহনকারী ছোট-বড় প্রতিটি নৌকা থেকে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেয় পাথর ব্যবসায়ী সমিতি। কথা হলে বেশ কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ী জানান, এ ক্ষেত্রে সরকারি ইজারা ডাকের ব্যবস্থা করলে ভালো হতো। এখানে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে পাথরের ব্যবসা।

জানতে চাইলে উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাচ্চু নদীতে পাথর স্তূপ করে রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, এসিল্যান্ড এসে পাথর সরাতে বলে গেছেন।

স্থানীয় মুসুল্লি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইফতেখার উদ্দিন ভূঁইয়া বিপ্লব বলেন, ‘সরকারি ইজারা ডাক নেই। অনেকেই ইউপি থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করে আসছে। আমার জানামতে, অনেকেরই ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলও আছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই।’

কিশোরগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মাহমুদ ফয়সাল জানান, তিনি এখানে নতুন এসেছেন। বিষয়টি খোঁজ নিতে তিনি একজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, নদীতে পাথর রাখার জন্য পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্ন হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সেটা করতে পারেন না। পাথর ভাঙার জন্য যে ক্রাশার মেশিন ব্যবহার করছে, তা ব্যবহার করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

এই বিভাগের আরো খবর