নব্য ফেরাউন রূপে আবির্ভাব হয়েছিল শেখ হাসিনা: মামুনুল হক

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সংগ্রামী মহাসচিব শায়খুল হাদিস আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, নব্য ফেরাউন রূপে আবির্ভাব হয়েছিল শেখ হাসিনা। জালেম ফেরাউন যেমন পৃথিবীতে বনি ইসরাইলের উপর গণহত্যা চালিয়েছিল, আজকের যুগের নব্য ফেরাউন শেখ হাসিনা সরকার বিগত ১৬টি বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসের ঘৃণ্যতম সকল গণহত্যা চালিয়েছে। রবিবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জের সিংগাইর বাসস্টান্ডে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিংগাইর উপজেলা শাখা আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের প্রানের বিনিময়ে, ত্যাগ কোরবানি এবং শাহাদাতের রক্তের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। ৫৩ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ খুঁজে পায়নি। বিশেষ করে বিগত ১৬টি বছর এদেশের মানুষের বুকের উপর চেপে বসেছিল এক স্বৈরশাসক। সেই স্বৈরশাসকে শুধু ফেরাউনের সাথেই তুলনা করা যায়। জালিম শেখ হাসিনা নায়াবে নবীদেরকে, আলেম-ওলামাদেরকে, অপমান এবং লাঞ্ছিত করার এমন কোন চেষ্টা নেই যেটা তিনি করেননি। জালেম ফেরাউন যেমন পৃথিবীতে বনি ইসরাইলের উপর গণহত্যা চালিয়েছিল, আজকের যুগের নব্য ফেরাউন শেখ হাসিনা সরকার বিগত ১৬টি বছর পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসের ঘৃণ্যতম সকল গণহত্যা চালিয়েছে।

আল্লামা মামুনুল হক বলেন, এতদিন এদেশের মানুষ জানতো এবং রাষ্ট্রীয় ভাবেও পালন করা হতো আগস্ট মাসকে শোকের মাস হিসেবে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে ইতিহাস পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে নতুন বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে, সেই বিপ্লবের মাধ্যমে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। সেই পরিবর্তনের মধ্যে অন্যতম হলো শোকের মাস আগস্ট বিজয়ের মাসে পরিণত হয়েছে। স্পষ্ট ভাষায় আমরা বলতে চাই, এই ৫ আগস্ট, এই বিপ্লব, এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে, পূর্ণাঙ্গভাবে রূপ দেয়ার আরেকটি অন্যতম মাইলফলক।

মামুনল হক বলেন, জালিম শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে পিলখানায় ৫৭ জন দেশপ্রেমী সশস্ত্র সেনাবাহিনী কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। ২০১৩ সালে ৫মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নবী প্রেমী তৌহিদী জনতা, ঘুমন্ত তাহাজ্জুদ গুজারদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে। ২০২১ সালে নরঘাতক, গুজরাটের কসাই নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ আনতে গিয়ে শেখ হাসিনা তার দেশের জনগণের বুকের উপর পাখির মত গুলি চালিয়েছে। পরবর্তী ২০২৪ সালের জুলাই মাসজুড়ে যে গণহত্যা পরিচালিত হয়েছে, যুদ্ধ ছাড়া পৃথিবীর কোন দেশে এই ধরনের ঠান্ডা মাথায় খুন করার দৃষ্টান্ত বিরল। এবং দুঃখজনক বিষয় হলো এই হত্যাকান্ডগুলোকে পরিচালনা করার জন্য দেশের জনগণের ট্যাক্স এবং মাথার ঘাম পায়ে ফেলানো পয়সা দিয়ে লালিত পালিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অন্যায় ভাবে ব্যবহার করেছে।

তিনি বলেন, যে পুলিশরা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা হিসেবে, নিরাপত্তা রক্ষাকারী হিসেবে ব্যবহার হবার কথা, সেই পুলিশদেরকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, অর্ধশতাধিক নিরীহ পুলিশ হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়েছে। কিছু দাগি লিডারলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নামে পুলিশ লীগের কিছু সদস্যের অতিরিক্ত দলবাজির কারণে নির্বিচারে ছাত্রজনতাকে গুলি করে হত্যা করবার দৃশ্যগুলো দেখে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে আগুন ধরে গিয়েছিল। এখন সকল পুলিশ সদস্যদের কে তার খেসারত দিতে হচ্ছে। সে খেসারত পুলিশ সদস্যরা দেবে কেন। এই খেসারত দিতে হবে শেখ হাসিনাকে, এই খেসারত দিতে হবে ওবায়দুল কাদেরকে, এই খেসারত দিতে হবে আওয়ামী লীগকে, এই খেসারত দিতে হবে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, হেলমেট লীগ এবং হাতুড়িলীগকে।

তিনি আরো বলেন, আমরা পুলিশ ভাইদের কে বলব আপনারা কাজে নামেন, আপনারা দেশের সেবায় নিয়োজিত হন। আর আপনাদের নিরীহ যে সকল নিরপরাধ পুলিশদেরকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে, তার জন্য শেখ হাসিনা এবং তার দোসরদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করুন।

আল্লামা মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ রেখে পালিয়ে গেছে। বাংলাদেশ থেকে পালানোর জন্য বাংলাদেশ এক ইঞ্চি মাটিও শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়নি। আকাশে উড়াল দিয়ে দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির কুলে গিয়ে পড়েছে। সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করে এখন সেখান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ভারত শেখ হাসিনাকে কত দিন রাখতে পারবে সেটা আন্তর্জাতিক আদালতের ব্যাপার। সেটা আমরা কিছু বলবো না, কিন্তু দিল্লিতে বসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করলে ১৮ কোটি মানুষ রুখে দাঁড়াবে।

ভারতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পতনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে গিয়ে, ভারত আজকে তার সমস্ত বাংলাদেশের অভিন্ন নদী গুলোর বাধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে প্লাবিত করেছে। ওরা মনে করেছিল বন্যার পানি দিয়ে ভাসিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ওরা দাবিয়ে রাখবে। আজ প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে গোটা বাংলাদেশ আজ বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। গোটা দেশ আজ ঐক্যবদ্ধ, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ও স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকবো ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে যে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, সেই বিপ্লব চূড়ান্ত রূপ ধারণ করবে, যদি আমরা ইনসাফ স্থাপন করতে পারি। ন্যায় ইনসাফ ভিত্তিক পরিপূর্ণ সমাজ যদি কায়েম করতে চাও, আল্লাহ প্রদত্ত খেলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা ছাড়া কোন বিকল্প নাই। তাই আগামী দিনে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হবো ইনশা আল্লাহ।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিংগাইর উপজেলার সভাপতি মাও.দ্বীন মোহাম্মদ (পীর সাহেব জায়গীর) এর সভাপতিত্ব পথসভায় বক্তব্য রাখেন, ইসলামী ছাত্র মজলিস সিংগাইর উপজেলা সভাপতি মুফতি আব্দুল্লাহ ফারুকী, গোবিন্দল মুসলিম নগর রাশিদিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাও. হারুনুর রশিদ, ঢাকা মহানগর উত্তরের মহাসচিব মাও. নাজমুল ইসলাম সাকিব, গোবিন্দল মুসলিম নগর রাশিদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাও. নাজমুল হক মানিকগঞ্জি, শহিদুল ইসলাম মেম্বার, মাও. ইমরান হোসাইন, মাও, মাহমুদুল হাসান, মাও. দেলোয়ার হোসেন, মাও. ওমর ফারুক, হাফেজ মাও. মুফতি সোয়াদ রব্বানী, হরিরামপুর উপজেলার সভাপতি মুফতি সালমান মাদানী, হাফেজ মাও. সাইফুল ইসলাম, মাও. আইয়ুব আনসারী, সায়েস্তা ইউনিয়ন সভাপতি মাও. মুজাফফর হোসেন, মাও. হাবিবুর রহমান, মাও. আব্দুর রহমান, মুফতি আলমগীর হোসেন রাশেদী, মাও. মামুনুল হক, মুফতি সালাহ উদ্দিন রহমানী, মাও. আব্দুল বাতেনসহ আরো অনেক ওলামা মাশায়েখগণ বক্তব্য রাখেন।

এই বিভাগের আরো খবর