নওগাঁয় কাঁচা মরিচের দামে মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপট
কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পার্থক্য ৬০ টাকা
মো. এ কে নোমান, নওগাঁ থেকে;
নওগাঁ শহরের বাজারগুলোতে কাঁচা মরিচের দামে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মরিচ ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও দুদিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৮০ টাকা দাম কমেছে, তবু কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত মূল্য ব্যবধানে ৬০-৭০ টাকার পার্থক্য বিরাজ করছে। এই বৈষম্য কৃষক ও ভোক্তা—দুই পক্ষেই অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর, বদলগাছী, সদর এবং মান্দা উপজেলায় সর্বাধিক কাঁচা মরিচ উৎপাদিত হয়। চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে ৯৬৫ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে, যা থেকে মোট ১ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে।
মহাদেবপুরের মহাদেবপুর হাট, চকগৌরী হাট, মাতাজীহাট এবং বদলগাছীর কোলা হাট ও ভান্ডারপুর হাটে আজ কৃষকরা কাঁচা মরিচ ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় প্রতি কেজি দরে বিক্রি করেছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসব হাট থেকে মরিচ কিনে নওগাঁ জেলা সদরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন।
তবে শহরের পাইকারি বাজারে এসব মরিচ ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ, কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য ২৫০ টাকায় বিক্রি করলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা এক হাত বদলেই কেজিতে ৭০ টাকা লাভ করছেন। এই মূল্য ব্যবধান নিয়ে কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে, কারণ কৃষিকাজের ব্যয় বেড়ে গেলেও তারা প্রত্যাশিত লাভ পাচ্ছেন না।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান, “গ্রীষ্মকালীন মরিচের মৌসুম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। শীতকালীন মরিচ শিগগিরই বাজারে আসবে, ফলে মরিচের দাম কমে আসবে।” তিনি আরও বলেন, “এই মৌসুমে নওগাঁয় ৮৫০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন মরিচ চাষ হচ্ছে। নতুন মরিচ বাজারে এলে সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্য সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।”
উৎপাদন বাড়লেও কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন। তারা অভিযোগ করছেন, বাজার ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীরা মূলত লাভের অংশটি হাতিয়ে নিচ্ছে। এক কৃষক বলেন, “মরিচ চাষের খরচ বেড়েছে, কিন্তু বাজারে ভালো দাম পাচ্ছি না। আমরা ২৫০ টাকায় মরিচ বিক্রি করি, অথচ শহরে গিয়ে সেই মরিচ ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়। এর বেশিরভাগ লাভ পাইকারি ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যায়।”
অন্যদিকে, সাধারণ ভোক্তারাও খুচরা বাজারে মরিচের উচ্চমূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নওগাঁ শহরের এক ক্রেতা বলেন, “বাজারে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। মরিচের দাম এত বেশি যে সাধারণ মানুষকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃষকদের সরাসরি বাজারে যুক্ত করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আধুনিক কৃষি মার্কেট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে কৃষকরা যেন সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারেন, সেদিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। এছাড়া, সরকারের তত্ত্বাবধানে কৃষিপণ্যের মূল্য নির্ধারণে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা উচিত।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শীতকালীন মরিচের সরবরাহ শুরু হলে বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য কৃষি পণ্য বিপণন ব্যবস্থায় সমন্বয় এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমানো দরকার। কৃষক ও ভোক্তার উভয়ের স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এমন পরিস্থিতি বারবার তৈরি হতে পারে।
গ্রীষ্মকালীন মরিচের মৌসুম শেষ পর্যায়ে চলে আসায় মূল্য কিছুটা কমতে শুরু করেছে, তবে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত মূল্য ব্যবধান নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে। কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা এবং বাজার ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। শীতকালীন মরিচের বাজারে আসার মাধ্যমে দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে এই সময়ের মধ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।