নিজস্ব প্রতিবেদক:
পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করা গভীর নিম্নচাপটি উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। আজ শনিবার বিকেলের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘রেমাল’। ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাসের কারণে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হওয়ারও আশঙ্কা আছে। আবহাওয়া অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। বাতাসের চাপ কিছুটা বেড়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে নদ-নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছে কিছুটা। পটুয়াখালীর পায়রা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। সব মাছধরা ট্রলার সমূহকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। তবে এটি জোয়ার-ভাটার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
আজ শনিবার সচিবালয়ে ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতির জরুরি সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে তা আজ দিবাগত ভোররাত থেকে সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এতে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকা আক্রান্ত হতে পারে। প্লাবিত হতে পারে ব্যাপক এলাকা।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজ শনিবার রাত ১২টার পর থেকে সিরিয়াস পর্যায়ে যেতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ও চার হাজার উপকূলীয় আশ্রয়কেন্দ্র। ওয়ারলেসের মাধ্যমে সরাসরি ১৭৪টি মাঠ কার্যালয়কে সর্বোচ্চ প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ডও প্রস্তুত থাকবে বলে দাবি করেছেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন,‘সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।’ তথ্য বিনিময়ের লক্ষ্যে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এনডিআরসিসি খোলা থাকবে ২৪ ঘণ্টা।
আগামীকাল রোববার ভোর থেকে ঝড় আঘাত হানতে পারে জানিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মুহিববুর রহমান জানান, আজ রাতের মধ্যেই উপকূলীয় অঞ্চলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেয়া হবে।
আজ শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (০৬) এ বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি আজ শনিবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। বাতাসের চাপ কিছুটা বেড়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে নদ-নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছে কিছুটা। দুপুর ১২টার দিকে পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে নিম্নচাপটি ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। এছাড়া, উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই পটুয়াখালীর পায়রা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার ও মোংলা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। সব মাছধরা ট্রলার সমূহকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবা সুখী বলেন, গভীর নিম্নচাপটি আজ বিকেল বা রাত নাগাদ ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হতে পারে। উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।