দ্বিতীয়বারের মতো ফিফার বর্ষসেরা ট্রফি মেসির হাতে

মেহেরাব হোসেন নাঈম:

দ্বিতীয়বারের মতো ফিফার বর্ষসেরা ট্রফি হাতে উঠেছে ফুটবল জাদুকর আর্জেন্টাইন তারকা মেসির হাতে। পাশাপাশি বিশ্বকাপ অর্জনের পর ফিফার বেশ কটি পুরস্কার এবার আর্জেন্টিনার ঘরে গেল।

করিম বেনজেমা ও কিলিয়ান এমবাপ্পে কে পেছনে ফেলে ফিফা ২০২২ এর বর্ষসেরা পুরস্কার জিতলেন মেসি। ফিফার এ ‘বেস্ট’ পুরস্কারে সারা বছরের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হয়েছে। মেসি ওই তারকার চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে পুরস্কারটি জিতলেন।

আর টানা দ্বিতীয়বার বর্ষসেরা নারী খেলোয়াড়ের ‘বেস্ট’ ট্রফি জিতেছেন বার্সেলোনা ও স্পেনের তারকা অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াস। তার হাতে ট্রফি তুলে দেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো।

ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার হাতে পাওয়ার পর আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘এই বছরটা আমার জন্য দারুণ ছিল। অনেক ত্যাগের পর স্বপ্নপূরণ হয়েছে। খুব কম খেলোয়াড়ই এই স্বপ্ন পূরণ করতে পারে এবং আমি তা পেরেছি। নিজেরপরিবার ও আর্জেন্টিনার মানুষদের ধন্যবাদ জানাই।’

গত ২০১৬ সালে ‘দ্য বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ডস’ চালুর পর সে বছর ছেলেদের বর্ষসেরা হন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। পরের বছরও পর্তুগিজ তারকাই পুরস্কারটি জেতেন । এরপর ২০১৮ সালে লুকা মদরিচের পর ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো ‘বেস্ট’ ট্রফি জেতেন মেসি। আর গত দুই বছর পুরস্কারটি জিতেছেন বায়ার্ন মিউনিখের পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কি।

এবারের বর্ষসেরা পুরস্কার দেওয়ার শুরুতে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো মঞ্চে উঠে গত বছর মারা যাওয়া ফুটবলারদের স্মরণ করেন। ব্রাজিলের প্রয়াত কিংবদন্তি পেলেকে স্মরণ করে ইনফান্তিনো বলেন, ‘পেলেই ফুটবল। পেলে চিরকালীন।’

অনুষ্ঠানে তিনবার বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি পেলের একটি ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। পেলেকে স্মরণ করতে মঞ্চে ওঠেন ব্রাজিলের আরেক কিংবদন্তি রোনালদো। দুবার বিশ্বকাপজয়ী রোনালদো পেলেকে পর্তুগিজ ভাষায় স্মরণকরেন। ‘কালোমানিক’কে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিফার পেলের স্ত্রীর হাতে।

একটি বিশেষ সম্মাননা ট্রফিও তুলে দেওয়া হয়

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পেলেকে স্মরণ শেষে ফিফার বর্ষসেরা নারী গোলকিপারের হাতে পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে ‘বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ডস’ শুরু হয়। এবার এ পুরস্কারটি জিতেছেন গত বছর ইংল্যান্ডের হয়ে ইউরোজয়ী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোলকিপার মেরি আপস। আইভরি কোস্টের সাবেক স্ট্রাইকার দিদিয়ের দ্রগবা ও কানাডা নারী দলের সাবেক গোলকিপার স্টেফানি ল্যাব্বে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন।

ফিফা বর্ষসেরা পুরুষ গোলকিপারের পুরস্কার পেয়েছেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ। ব্রাজিলের সাবেক গোলকিপার হুলিও সিজার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করতে মঞ্চে ওঠেন। ফিফার গত বছরের বর্ষসেরা গোলকিপারের ট্রফিটাও তার হাতেই উঠেছে।

মরক্কোর ইয়াসিন বুনু ও বেলজিয়ামের থিবো কোর্তোয়াকে পেছনে ফেলে ‘বেস্ট গোলকিপার’ ট্রফি জিতলেন মার্তিনেজ। অশ্রুসজল মার্তিনেজট্রফিটি হাতে নিয়ে বলেছেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের জন্য দারুণ মুহূর্ত। দেশের জন্য গর্বের। সবাই জানতে চায় আমার আদর্শ কারা? মা-বাবাকে দৈনিক ৮-৯ ঘণ্টা কাজ করতে দেখেছি। তারাই আমার আদর্শ।’

এরপর ফিফার বর্ষসেরা গোলের ‘পুসকাস

অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নারী

ফুটবলের কিংবদন্তি কার্লি লয়েড বিজয়ী হিসেবে পোল্যান্ডের মারচিন ওলেকসির নাম ঘোষণা বাইসাইকেল কিকে চোখ ধাঁধানো গোল করেছিলেন ওলেকসির নাম ঘোষণা করেন। পোল্যান্ডের অ্যাম্পিউটি ফুটবলেকে বাইসাইকেল কিক করে চোখ ধাঁধানো গোল করেন ওলেকসি।

অ্যাম্পিউটি ফুটবল হচ্ছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের খেলা, যাদের একটি পা নেই (গোলরক্ষকের ক্ষেত্রে একটি হাত নেই)। ক্রাচে ভর করে ছোটা যায়, কিন্তু বল খেলতে হয় এক পা দিয়ে ।

ফিফার বর্ষসেরা নারী কোচের পুরস্কার জিতেছেন ইংল্যান্ড নারী দলকে ইউরো জেতানো সারিনা ভিগমান। বুলগেরিয়ান কিংবদন্তি রিস্টো স্টয়চকভ তার হাতে ট্রফি তুলে দেন।

পুরুষদের বর্ষসেরা কোচের সংক্ষিপ্ত তালিকায়

মনোনীত হয়েছিলেন তিনজন। রিয়াল মাদ্রিদের

কোচ কার্লো আনচেলত্তি, আর্জেন্টিনার কোচ

লিওনেল স্কালোনি ও ম্যানচেস্টার সিটির কোচ

পেপ গার্দিওলা।

তবে রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাসের সাবেক কোচ ফাবিও কাপেলো বিশ্বকাপজয়ী স্কালোনির হাতেই বর্ষসেরা কোচের ট্রফিটি তুলে দেন। এ সময়ে জয়ের পর স্কালোনি বলেছেন, ‘এএফএ সভাপতিকে ধন্যবাদ, ২৬ খেলোয়াড়, আইমার, আয়ালা ও আমার পুরো কোচিং স্টাফদের ধন্যবাদ। দেশের হয়ে কিছু জেতার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। এই জয়টা আমার স্ত্রী-সন্তান, আমার শহর ও দেশের মানুষের জন্য। তাদের জন্যই আজ আমি এখানে।’

অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে ‘ফিফা ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ড’-এ বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। জর্জিয়ান রাইটব্যাক লুকা লোশোভিলি জিতেছেন ফেয়ার প্লে ট্রফি। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রিয়ার ঘরোয়া ফুটবলে ম্যাচের মধ্যে চেতনা হারানো এক ফুটবলারের জীবন বাঁচান লোশোভিলি।

এবছর ফিফা ফ্যান অ্যাওয়ার্ডও উঠেছেআ র্জেন্টিনার ঘরে। আর আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা পেয়েছেন সেরা সমর্থকের পুরস্কার। আর্জেন্টিনার সমর্থকদের প্রতিনিধি হিসেবে ট্রফি নেন কার্লোস পাসকুয়াল। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের জার্সি ও ড্রামস নিয়ে মঞ্চে উঠেছিলেন ‘এল তুলা’ নামে খ্যাতি পাওয়া ৮২ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন।

এক নজরে ‘দ্য বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ডস’

বিজয়ীরা:

বেস্ট ফিফা ওমেনস প্লেয়ার:অ্যালেক্সিয়া পুতেয়াস

বেস্ট ফিফা মেনস প্লেয়ার: লিওনেল মেসি

বেস্ট ফিফা ওমেনস কোচ: সারিনা ভিগমান

বেস্ট ফিফা মেনস কোচ: লিওনেল স্কালোনি

বেস্ট ফিফা ওমেনস গোলকিপার: মেরি আপস

বেস্ট ফিফা মেনস গোলকিপার: এমিলিয়ানো

মার্তিনেজ ফিফা পুসকাস অ্যাওয়ার্ডস: মারচিন ওলেকসি বেস্ট ফিফা ফ্যান অ্যাওয়ার্ড: আর্জেন্টিনার সমর্থক।

 

এই বিভাগের আরো খবর