দুই মন্ত্রীকে বরখাস্ত, মুইজ্জুর ভারত সফর যে সংকেত দিচ্ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

দীর্ঘ দিন ধরে ধরে চলা কূটনৈতিক টানাপোড়েনের অবসান ঘটাতে ভারত সফরে যাচ্ছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে রোববার (৬ অক্টোবর) তিনি দিল্লিতে পৌঁছাবেন বলে জানা গেছে।

আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি ভারতে থাকবেন। ৮ অক্টোবর দিল্লিতে তাজমহল পরিদর্শন করবেন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। এদিন দুই ঘণ্টা পর্যটকদের জন্য তাজমহলের দরজা বন্ধ থাকবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মুইজ্জুর সফরের তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাম্প্রতিক মালদ্বীপ সফরের পর প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর ভারত সফর মালদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্বের সাক্ষ্য দেয়। আশা করা হচ্ছে এই সফর দুদেশের জনগণের মধ্যে সহযোগিতা এবং সম্পর্ক শক্তিশালী হবে।

সফরকালে মুইজ্জু ভারতের কাছে তার দেশের জন্য ‘বেল আউট’ চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ‘বেল আউট’ হচ্ছে দেনার দায়ে বা মূলধনসংকটে পড়ে দেউলিয়া হওয়ার পথে কোনো দেশ বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তরফে আর্থিক সহায়তা করা।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটি মুইজ্জুর হবে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। এর আগে গত জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে আসেন মালদ্বীপের এই প্রেসিডেন্ট। এসময় মুইজ্জু ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং মোদির সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থের দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে বৈঠক করবেন।

এর আগে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মুইজ্জুর সফরের আগে মোদিকে নিয়ে একসময় অবমাননাকর মন্তব্য করা মালদ্বীপের দুই জুনিয়র মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। মোদিকে কটাক্ষ করায় চলতি বছর ওই দুই মন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর মুইজ্জুর ভারত সফরের আগে গত সেপ্টেম্বরে তারা পদত্যাগপত্র জমা দেন। অব্যাহতি নেয়া দুই মন্ত্রীর নাম মরিয়ম শিউনা এবং মালশা শরিফ। তবে তারা পদত্যাগপত্রে বলেন, ব্যক্তিগত কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মুইজ্জুর এই ভারত সফরের অর্থ হচ্ছে যে মালদ্বীপ তার জায়ান্ট প্রতিবেশীকে অবজ্ঞা করতে পারেনা বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। এ বিষয়ে মালদ্বীপের একজন বিশ্লেষক ও ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার আজিম জহির বিবিসিকে বলেছেন, এই সফরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বোঝা যায় যে মালদ্বীপ ভারতের ওপর কতটা নির্ভরশীল- এটি এমন এক নির্ভরতা যা অন্য কোনো দেশে পূরণ করা সহজ হবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালদ্বীপের একজন সিনিয়র এডিটর বিবিসিকে বলেন, মুইজ্জুর এই সফরের প্রধান অগ্রাধিকার হলো অনুদান-সহায়তা ও ঋণ পরিশোধের পুনর্গঠন আকারে একটি আর্থিক হেল্পলাইন সুরক্ষিত করা।

ফার্স্ট পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সেপ্টেম্বরে মালদ্বীপের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার- যা দিয়ে এক থেকে দেড় মাস দেশটি আমদানি করতে পারবে। এমন অর্থনৈতিকভাবে টালমাটাল পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেয়ে মোদির কাছে সাহায্য চাইবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ মুইজ্জু গত বছর মালদ্বীপের ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়। এরপর তিনি ক্ষমতায় আসার পরেই ভারতীয় সেনাদের মালদ্বীপ ছেড়ে যেতে বলেন এবং তা নিশ্চিত করেন।

এ ছাড়া মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফরের ছবিতে মন্ত্রী মরিয়াম শিউনা এবং অন্যান্য নেতাদের আপত্তিজনক মন্তব্যকে ঘিরে দুই দেশের কূটনৈতিক উত্তেজনা ও সংঘাতের পারদ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ওই আপত্তিকর পোস্ট নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় গত ৮ জানুয়ারি ভারত মালদ্বীপের হাই কমিশনারকে তলব করে। এরপরেই চলতি বছরে ওই দুইজন মন্ত্রীকে বরখাস্ত করে মালদ্বীপ সরকার। শেষমেশ মুইজ্জুর ভারত সফরের আগে তারা পদত্যাগ করেন।

ভারত মহাসাগরে অবস্থিত প্রায় ১ হাজার ২০০টি প্রবালদ্বীপ নিয়ে মালদ্বীপ গঠিত। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ২০ হাজার। ছোট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ তার বেশির ভাগ খাদ্য, অবকাঠামো নির্মাণ ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিশাল প্রতিবেশী দেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল।

এই বিভাগের আরো খবর