নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দীপ্ত টিভির কর্মী তানজিল জাহান তামিমকে হত্যার ঘটনায় ৫ আসামিকে ৪ দিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে তাদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক তাদের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে সকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনা (ডিসি) মো. রুহুল কবির খান জানান, দীপ্ত টিভির কর্মী তানজিল জাহান তামিম হত্যার ঘটনায় ১৬ জনের নামে মামলা করেছে পরিবার, যার মধ্যে তিন নম্বর আাসামি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মামুন এবং বিএনপি নেতা ও প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেডের কর্ণধার শেখ রবিউল আলম রবির প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তদন্ত করে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
মো. রুহুল কবির খান জানান, জমির মালিককে প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ লিমিটেডের পাঁচটি ফ্ল্যাট দেয়ার চুক্তি থাকলেও, তারা দুটি হস্তান্তর করেছে। বাকি তিনটির মধ্যে একটি ফ্ল্যাট অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মামুনের শ্বশুরের কাছে বিক্রি করে প্লিজেন্ট প্রোপার্টিসের কর্নধার শেখ রবিউল আলম রবি। ফ্ল্যাটটি তারা অবৈধভাবে জবরদখল করে রেখেছিল। যা নিয়ে গত তিন বছর ধরেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
এই দ্বন্দ্বের জেরে অভিযুক্তরা গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে ফ্ল্যাটে অতর্কিত হামলা করলে দীপ্ত টিভির কর্মকর্তা তানজিল ইসলাম জাহান তামিম গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
হত্যাকাণ্ডে বিএনপি নেতার দায় কতটা? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিসি রুহুল কবির খান বলেন, জমির মালিকের সঙ্গে ডেভেলপার কোম্পানির দ্বন্দ্ব। সুতরাং তার (কোম্পানির এমডি) তো দায়ই থাকবে। বাকিটা তদন্তে উঠে আসবে।
এ ঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি- এমন অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, আমরাও প্রাথমিকভাবে তার (ওসি) অবহেলা পেয়েছি। দায়িত্বে অবহেলার জন্য হাতিরঝিল থানার ওসিকে এর মধ্যেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ডেভেলপার কোম্পানি দুটি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছে, বাকি তিনটির মধ্যে একটি ফ্ল্যাট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মামুনের শ্বশুরের কাছে বিক্রি করে প্লিজেন্ট প্রোপার্টিজ। এ নিয়েই গত তিন বছর ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে তেজগাঁও বিভাগের ডিসি রুহুল কবির খান বলেন, আমরা রাজনৈতিক পরিচয় দেখছি না। আমরা অপরাধ দেখছি, তাদের অপরাধী হিসেবে দেখছি। সে যেই হোক, দায় থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমরা চার্জশিট দেবো। প্রাথমিকভাবে আমরা তার (বিএনপি নেতা রবি) সম্পৃক্ততা পাচ্ছি। এ ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল তা তদন্তে উঠে আসবে। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তাকে মামলার এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। আমরা তার সম্পৃক্ততার বিষয় তদন্ত করে দেখবো।
এ বিষয়ে কথা বলতে বিএনপি নেতা শেখ রবিউল আলম রবিকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হয়। তবে মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। পরে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর মেলেনি।