টঙ্গীতে ইজতেমা ময়দানে জুবায়ের ও সাদপন্থিদের সংঘর্ষে নিহত ৩

এম এইচ শাহীন, গাজীপুর: গাজীপুরের টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা পালনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে অন্তত ৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোর চারটার দিকে বিদেশি নিবাসের ছাউনিতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে নিহতরা হলেন—তাবলিগ জামাতের বাংলাদেশি নেতা মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার আমিনুল ইসলাম বাচ্চু (৫৫) ও ঢাকা জেলার দক্ষিণখান থানার বেরাইদ এলাকার বেলাল (৬০), ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারী বগুড়া জেলার তাইজুল ইসলাম (৬৫)।টঙ্গী ইজতেমা ময়দানের কয়েকটি প্রবেশ ফটকে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আনুমানিক ৪০ থেকে ৫০ জন আহত হন। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক। আহতদের টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। জানা যায়, মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত জোড় ইজতেমা পালন করেন কয়েক হাজার মুসল্লি। এরপর দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বরে জোড় ইজতেমায় আয়োজনের অনুমতি চায় ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির আয়োজক কমিটির (বাংলাদেশের) শীর্ষ মুরব্বিরা। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে দ্বিতীয় দফায় জোড় ইজতেমার অনুমতি দেওয়া হয়নি মাওলানা সাদ অনুসারীদের।
গত কয়েক দিন যাবৎ সরকার ও মাওলানা জুবায়ের অনুসারী ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরুব্বিদের কাছে দফায় দফায় জোড় ইজতেমা করার অনুমতি চায় মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারী ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরব্বিরা। গত বৃহস্পতিবার সকাল দশটার দিকে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির ইজতেমা আয়োজক কমিটির কয়েকজন শীর্ষ মুরব্বি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ- পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে যান। সেখানে আলোচনা শেষে দুপুরে ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশের বিশ্ব ইজতেমা মসজিদে ফেরার পথে টঙ্গীর মুন্নু গেট এলাকায় পৌঁছালে আগে থেকেই লাঠি- সোঁটা নিয়ে অবস্থান করা জুবায়ের অনুসারীরা ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কে সাদ অনুসারীদের একটি প্রাইভেট কারে ভাঙচুর চালায়। এ সময় প্রাইভেটকারে থাকা সাদ অনুসারীদের পাঁচজন আহত হন। এ ঘটনার পর থেকেই দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের রেজিস্ট্রারের তথ্য অনুযায়ী, আজ বুধবার সকাল আটটা পর্যন্ত ৩৯ জন ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ১১ জনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগে দায়িত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ সেবিকা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বুধবার ভোর সাড়ে চারটা থেকে আহতরা চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসতে থাকেন। একজনের ব্যক্তির মরদেহ হাসপাতালে আছে।’ তবে কার মরদেহ হাসপাতালে আছে সেটি তিনি জানাতে পারেননি। বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের অনুসারী ইজতেমা আয়োজক কমিটির গণমাধ্যম সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, ‘ইজতেমা ময়দানে আমাদের ঘুমন্ত সাথিদের ওপর হামলা করে একজনকে হত্যা করা হয়েছে।’ ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির ইজতেমা আয়োজক কমিটির গণমাধ্যম সমন্বয় মুহাম্মদ সায়েমও তাইজুল ইসলামের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এদিকে, ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক বেলাল হোসেনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বুধবার ভোর ৪টার দিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর তাদের ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক বেলাল হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-দক্ষিণ) এমএম নাসিরুদ্দিন জানান, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকেই দুই পক্ষের অনুসারীরা পৃথকভাবে ইজতেমা ময়দানের ভেতরে ও বাইরে জড়ো হতে থাকে। ভোরে সংঘর্ষে জড়ান তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর