চরফ্যাসনে আগাম জাতের তরমুজ চাষে সফল কৃষকরা

আরিফ হোসেন, চরফ্যাসন ॥

তরমুজ মৌসুম ভিত্তিক ফল। বছরে এই ফলটি একবার চাষ হয়ে থাকে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় তরমুজ চাষ করা যেমন কষ্ট আবার ব্যয়বহুল খরচ। তরমুজের ফলন ভালো হলে চওড়া দামেও বিক্রি করেন কৃষকরা।

 

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় ভোলার চরফ্যাসনের মুজিবনগরে আগাম জাতের তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। প্রচন্ড গরম পড়ার কারণে দাম ভালো থাকায় লাভের আশা করছেন মুজিবনগরের কৃষকরা। অনেকেই তরমুজ বিক্রি করে সফলতা পেয়েছেন। আগাম জাতের তরমুজের চাষের জন্য বিখ্যাত মুজিবনগর।

জানা যায়, আগাম জাতের তরমুজের বীজ পৌষ মাসের মধ্যে চাষাবাদ শুরু করা হয় এবং ফাল্গুন মাসের শেষ ও চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তরমুজ বিক্রি করেন কৃষকরা। এতে তারা বেশি লাভমান হন। বর্তমানে প্রতি একর জমিতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা।

কৃষকদের খেত থেকে পাইকাররা তরমুজ কিনে নিয়েছে আবার কেউ তরমুজ কর্তন করে নিজ খরচে নিচ্ছেন বিভিন্ন যায়গাতে। আবহাওয়া ভালো হলে বড় আকারের তরমুজ বিক্রি হয় শত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুজিবনগরের ২নং ওয়ার্ডে শামিম নামের এক কৃষক খেত থেকে বড়, মাঝারী ও ছোট আকারের তরমুজ সংগ্রহ করে ট্রলার বুঝাই করছেন। লঞ্চ যোগে ঢাকার নারায়ণগঞ্জ নিয়ে যাবেন বলে তিনি জানান। এর মধ্যে খেত থেকে তরমুজ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জেলাতে পাঠিয়েছেন পাইকাররা পেয়েছেন চওড়া দাম। এ ছাড়াও মুজিবনগরের বিভিন্ন কৃষকের জমিতে পেকে ওঠেছে আগাম জাতের তরমজু। আবার অনেকেই পানি দিচ্ছেন তরমুজ গাছে। খুব শিখ্রই বাকি তরমুজ পাকা শুরু করবে।

চরফ্যাসন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছরে চরফ্যাসন উপজেলায় লক্ষমাত্রা ধরা হয়ছে ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমি। কিন্তু ১৫ হাজার ৮২৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ হচ্ছে।

 

কৃষক শামিম পাটওয়ারী জানান, ১২ বছর যাবত তরমুজ চাষাবাদ করে আসছেন। আগাম জাতের তরমুজ ৮ বছর পর্যন্ত করা হয়নি। তাতে ব্যপক লোকসান গুনতে হয়েছে। গত ৩ বছর ধরে আগাম জাতের তরমুজ চাষাবাদ করে বেশ লাভমান হয়েছেন। এ বছর আড়াই একর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ করেছেন। সার-ঔষাধের দাম বেশি হলেও ফলন ভালো হয়েছে। মুজিনগর একটি চর। এই চরের চারদিকে বেরিবাঁধ থাকলে জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতিগ্রস্ত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে দাবী করছেন।

কৃষক হারুন সর্দার জানান, এই মৌসুমে সার ঔষাধের দাম লাগামহীন। তারপরও তরমুজের ফলন বেশ ভালো হয়েছে আবহাওয়া ভালো থাকার কারনে। চলতি মৌসুমে একর প্রতি প্রায় ৮০ হাজার টাকা মতো খরচ হয়েছে। সার ঔষাধের পাশাপাশি লোকজনের দামও বৃদ্ধি। সরকার সব ধরনের সহযোগীতা করলে সামনের দিনগুলোতে কৃষকরা আগাম জাতের তরমুজ চাষাবাদে ব্যপক আগ্রহী হবে।

তরমুজ চাষী হানিফ পটওয়ারী জানান, এ বছর পাঁচ একর জমিতে তরমুজ চাষাবাদ করেছে। তার মধ্যে আগাম জাতের তরমুজ চাষাবাদ করেছে ২ একর জমিতে। এর মধ্যে পাইকারদের কাছে ২ একর জমির তরমুজ বিক্রি করেছেন ৪ লক্ষ টাকা। বাকি যে তরমুজ খেতে আছে, আবহাওয়া ঠিক থাকলে বেশি দামে বিক্রি হবে। বুদ্ধি করে কয়েক বছর যাবত আগাম জাতের তরমুজ চাষ করে আসছি।

চরফ্যাসন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ওমর ফারুক জানান, চরফ্যাসন উপজেলার মুজিবনগরে তরমুজের চাষাবাদ বেশি। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকাতেও তরমুজ চাষাবাদ হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে সব সময় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। আগাম জাতের তরমুজ চাষাবাদে কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে।

 

এই বিভাগের আরো খবর