গাজীপুরপ্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিটের কাপিলাতলী মৌজায় অভিযান চালিয়ে নির্মাণাধীন ও সদ্য নির্মিত ১২০টি অবৈধ ঘরবাড়ি ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে প্রায় ৬ একর বনভূমি দখলমুক্ত করা হয়। উদ্ধারকৃত জমির বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এসময় হামলার শিকার এসি ল্যান্ডসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িসহ তিনটি গাড়ি ও দুটি এক্সকেভেটর ভাঙচুর করা হয়।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার ইজ্জতপুর এলাকায় অভিযান চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে শ্রীপুরের সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড) আতাহার শাকিল, ইউএনওর গাড়িচালক আব্দুল হানিফ, স্টাফ আশিকুর রহমান, রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ কর্মকর্তার গাড়িচালক লিটন, এক্সকেভেটর মেশিনের অপারেটর মো. রাসেল ও মো. হাকিমুল্লাহসহ অন্তত ১০জন আহত হয়। এ ঘটনায় দুই হামলাকারীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্রীপুর উপজেলার ৪৯নং কাফিলতলী মৌজার বনের জমি দীর্ঘদিন ধরে জবর-দখল হয়ে আসছে। গত ৫ আগস্ট গণঅভুত্থানের পর শ্রীপুরে ব্যাপক হারে বনের জমি দখল হয়। গত কয়েকদিন ধরে বন বিভাগের জায়গাতে গড়ে তোলা ওইসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে এলাকায় মাইকিং করা হয়। এতে অবৈধ দখলদাররা বন বিভাগের জায়গা থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিয়ে যায়নি। মঙ্গলবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের ইজ্জতপুর এলাকায় সকাল থেকে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, আনসার, বনকর্মী ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে বন বিভাগ। অভিযানে ওই এলাকার কয়েক একর বনভূমি উদ্ধার ও বনের জায়গাতে গড়ে তোলা শতাধিক স্থাপনা এক্সকেভেটর মেশিনের (ভেকু) সাহায্যে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। বিকেল ৩টায় অভিযান শেষে ফেরার পথে হঠাৎ স্থানীয় বনের জায়গা দখলকারীরা একত্রিত হয়ে উপজেলা প্রশাসনের ওপর হামলা চালায়।
ঢাকা বন বিভাগের সরকারী বন সংরক্ষণ (এসিএফ) মো. শামসুল আরেফিন জানান, বন আইনের ৬৬ ধারায় কাফিলাতলী গ্রাম এবং ইজ্জতপুর বাজারে বন বিভাগের জায়গাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযান শেষে ফেরার পথে বনের জায়গা জবর-দখলকারীরা পেছন থেকে হামলা চালায়। হামলাকারীরা তিনটি গাড়ি, দুটি এক্সকেভেটর ভাঙচুর করে। হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
শ্রীপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড) আতাহার শাকিল বলেন, অভিযান প্রায় শেষের দিকে, এ সময় একটি জমির মালিকানায় রেল ও বন বিভাগের সম্পৃক্ততা নিয়ে স্থানীয়রা অভিযোগ জানান। পরে ওই জমির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ বন্ধ করে ফেলার পথে অতর্কিতভাবে ওই জায়গার দোকান ও বসতঘরের মালিকরা পাশের রেললাইন থেকে পাথর ও ইট নিয়ে হামলা শুরু করেন। এ সময় ইউএনও স্যারের গাড়ি ও আমার গাড়িতে ঢিল ছোড়া শুরু করে। এক্সেকেভেটর মেশিনের দুই চালককে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। আমার ওপর ও ইউএনও অফিসের দুইজন স্টাফের ওপর হামলা করেছে। হয়তো উনাদের কেউ ইন্ধন দিয়ে এমন কাজ করিয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজিব আহমেদ বলেন, হামলায় সম্পৃক্ত কয়েকজনের নাম আমরা পেয়েছি। এদের মধ্যে সিরাজুল, তার ছেলে মাসুদ, তার বোন, স্ত্রী, মেয়ে শারমিন রয়েছে। বাকিদেরও পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বন বিভাগ তার বন আইনে মামলা করবে, আমরাও মামলা করব।