গাজীপুরে ভুল চিকিৎসায় গৃহবধূর মৃত্যু, পালালেন চিকিৎসক-নার্স

এম এইচ শাহীন, গাজীপুর: গাজীপুরের জয়দেবপুরে হলিল্যাব মেডিকেল সেন্টার ক্লিনিকে টনসিল আক্রান্ত হয়ে অপারেশন করতে গিয়ে আছিয়া খাতুন (২৫) নামে গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর শিববাড়ী এলাকার ওই ক্লিনিকে নার্সদের ভুল ইনজেকশনে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। মৃত্যুর পর হাসপাতাল থেকে কর্তৃপক্ষের লোকজন পালিয়ে গেছেন।

মারা যাওয়া আছিয়া খাতুন (২৫) রাঙামাটি সদরের আমির হামজার স্ত্রী। হামজা পরিবার নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোগরা বাইপাস এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন।

নিহতের স্বামী আমির হামজা বলেন, গত কয়েক দিন হলো আমার স্ত্রী টনসিলের সমস্যায় ভুগছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার নাগ কান ও গলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তফা ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসি। তিনি বলেন, যদি আপনারা মনে করেন অপারেশন করবেন, তাহলে যে কোনো দিন করতে পারবেন। আমি বাসায় গিয়ে রাতে সিদ্ধান্ত নেই আজ অপারেশন করব। আমার ছোট সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে আসি। বেলা ২টার পর অপারেশন করার কথা। আসার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করিয়ে হাসপাতাল থেকে বলা হলো ওষুধগুলো নিয়ে আসেন। এরপর আমি ওষুধ নিয়ে আসলাম। ওই সময়ে আমার স্ত্রী কথা বলছিলেন আমার সঙ্গে। আমার সামনে আমার স্ত্রীকে ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন দেওয়ার পর আমার স্ত্রীর মুখ দিয়ে সাদা ফেনা বের হতে শুরু করে। এরপর হাত-পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে কয়েক মিনিটের মধ্যে মারা যান। পরে ওই দুই নার্সসহ হাসপাতালের সবাই পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী গলার টনসিল ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা ছিল না। তাদের ভুল চিকিৎসায় আমার স্ত্রী মারা গেছে। এখন আমি ছোট দুই সন্তান নিয়ে কি করব। বাকি জীবন কীভাবে চলব। আমি এদের বিচার চাই।

হাসপাতালের রিসিপসনের ভর্তি ফরমে দেখা যায়, রোগীকে ভর্তির সময় মহানগরীর উত্তর বিলাসপুর এলাকার এক ফার্মাসিস্ট ভর্তি করিয়েছেন। তাতে চিকিৎসক হিসেবে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডা. মোস্তফা কামালের নাম লেখা রয়েছে।

এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে গিয়েও কাউকে পাওয়া যায়নি। হলিল্যাব মেডিকেল সেন্টার ক্লিনিকে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুনের মোবাইল ফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে মৃত্যুর কারণ জানতে মরদেহ উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এ বিষয়ে গাজীপুরের সিভিল সার্জন মাহমুদা আক্তার বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমি মাগরিবের পরেই যাই সেখানে। তেমন কাউকে পাইনি। যারা আছে কিছুই বলতে পারে না। কাগজপত্র চেয়েছি, একটি ছেলে আছে তারা কিছুই দেখাতে পারেনি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সেই সিস্টার ও ওটি বয় এর পেপারস নিয়ে আসতে বলেছি। এ ঘটনায় যদি কারও দোষ পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই বিভাগের আরো খবর