ঈদের সকালে নেপালকে হারিয়ে সুপার এইটে বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক:

সোমবার (১৭ জুন) সকালের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য ভালো না হলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সময়টা আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে উঠল। বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৫টায় নেপালের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে মাঠে নামে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়ে মাত্র ১০৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে বোলারদের বীরত্বে শেষ পর্যন্ত নেপালকে ২১ রানের হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর তাতেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইট নিশ্চিত করেছে টাইগাররা।

কিংসটাউনে টস জিতে বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় নেপাল। আর নিজেদের পরিকল্পনামাফিক বোলিং করে বাংলাদেশকে বিপদেও ফেলে। বাংলাদেশের ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ১৯.৩ ওভারে ১০৬ রানে থামে ইনিংস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নেপালের ব্যাটাররা তানজিম হাসান সাকিবের বোলিং তোপের মুখে পড়ে। তার বোলিংয়ে ধসে পড়ে নেপালের টপ অর্ডার। আর অন্যদিকে বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানও কম যাননি। এই দুই বোলারের তাণ্ডবে ১৯.২ ওভারে নেপাল মাত্র ৮৫ রানে অলআউট হয়। আর বাংলাদেশ ম্যাচটি জিতে নেয় ২১ রানের ব্যবধানে।

চার ম্যাচে ৩ জয় নিয়ে সুপার এইটের টিকেটও নিশ্চিত করল নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এই প্রথম বিশ্বকাপের এক আসরে তিন ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। দলকে রেকর্ড গড়া জয় এনে দেওয়ার ম্যাচে ৪ ওভারে দুই মেইডেনসহ মাত্র ৭ রানে ৪ উইকেট নেন তানজিম হাসান। মুস্তাফিজুর রহমান এক মেইডেনসহ ৭ রানে নেন ৩ উইকেট। আগের তিন ম্যাচে উইকেটশূন্য থাকা সাকিব ৯ রানে নেন ২ উইকেট। কোনো রান না যোগ করেই ৪ উইকেট হারায় নেপাল।

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে রোববার (১৬ জুন) ঈদ পালন করেছে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশে তার একদিন পরে অর্থাৎ সোমবার (১৭ জুন) পালিত হচ্ছে ঈদ। আর এদিন নেপালকে হারিয়ে সুপার এইট নিশ্চিত করে বাংলাদেশের মানুষের ঈদের আনন্দ দ্বিগুণ করে দিয়েছে টাইগাররা।

সুপার এইটে এক নম্বর গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশ সময় আগামী শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টায় অস্ট্রেলিয়া, পর দিন রাত সাড়ে ৮টায় ভারত ও ২৫ জুন ভোর সাড়ে ৬টায় আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সুপার এইটে প্রথম দুই ম্যাচ হবে অ্যান্টিগায়। আর শেষ ম্যাচের জন্য আবার সেন্ট ভিনসেন্টে ফিরবে তারা।

মাত্র ১০৬ রান তাড়ায় প্রথম দুই ওভার পার করে দিলেও তৃতীয় ওভারে উইকেট হারায় নেপাল। কুশাল ভুর্টাল তানজিমের ফুলটস বলে হয়ে যান বোল্ড। এক বল পরই আরেক উইকেট। এবার অনিল শাহ অহেতুক তুলে মারতে গিয়ে দেন সহজ ক্যাচ। ৯ রানে ২ উইকেট ফেলে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। তানজিম তার পরের ওভারে ধরেন আরেক শিকার। প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটার অধিনায়ক রোহিত পাউডেল তানজিমের বলে স্কয়ার কাট করে দেন পয়েন্টে ক্যাচ। ২০ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় নেপাল। এই অবস্থা থেকে ক্রমাগত কোণঠাসা হতে থাকে তারা।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে এসে মোস্তাফিজ আউট করেন আসিফ শেখকে। ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট কাভারে সাকিবের হাতে ধরা দেন ১৭ রান করা ব্যাটার। তানজিম তার শেষ ওভারে ধরেন আরেক শিকার। সন্দিপ জোরা তানজিমকে আলগা শট মারতে গিয়ে দেন সহজ ক্যাচ। ২৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারে চলে যায় হিমালয়ের দেশ।

২৬ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর চরম বিপর্যস্ত অবস্থায় জুটি গড়েন দীপেন্দ্র আইরি ও কুশল মাল্লা। শুরুতে থিতু হতে অনেক সময় নেন তারা, তাতে রানের চাপ বাড়ে। এই দুজনের ৫৮ বলে ৫২ রানের জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজ। নিজের তৃতীয় ওভারে স্লোয়ার বলে কাবু করে করেন উড়িয়ে মারতে যাওয়া মাল্লাকে। দীপেন্দ্র কিছুটা সম্ভাবনা জাগালেও বাকিরা আর পারেননি। গুলশান ঝা ক্রিজে এসেই ক্যাচ দেন তাসকিনের বলে।

দীপেন্দ্র পারেননি মোস্তাফিজকে সামলাতে। ১৯তম ওভারে উইকেট মেডেন নেন এই পেসার। শেষ ওভারে ২২ রানের সমীকরণ মেলানোর কাছেও যেতে পারেনি নেপাল। ওই ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে সাকিব বিশ্বকাপে এবার উইকেটের খাতা খুলেন।

এর আগে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় নেপাল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই চাপে বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বলেই তানজিদ হাসান তামিম ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে উড়াতে গিয়ে বোলার সোমপাল কামির হাতেই দেন সহজ ক্যাচ। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আগের দুই ম্যাচে ওপেন করলেও এদিন নেমে যান তিনে। কিন্তু রানের দেখা এবারও মেলেনি। দীপেন্দ্র আইরির অফ স্পিনে কাবু তিনি। ভেতরে ঢোকা বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হন ৫ বলে ৪ রান করে।

নেপালের বিপক্ষেও রানখরা লিটন দাসের। দুই অঙ্কে গিয়েই সোমপালের বলে পুল করে দেন সহজ ক্যাচ। শুরুর দুই ম্যাচের ব্যাটিং হিরো তাওহিদ হৃদয় গত ম্যাচের পর এদিনও রান পাননি। রোহিত পাউডালের নিরীহ স্পিন তুলে মারতে গিয়ে আউট হন ৯ রান করে। উইকেটের ভাব বুঝে মাহমুদউল্লাহ খেলছিলেন ভালোই, থিতুও হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সাকিবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে কাটা পড়ে থামেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। অভিজ্ঞ সাকিব নিজেও থিতু হয়ে টিকতে পারেননি। পাউডালের বলে পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে হন এলবিডব্লিউ। রিশাদ হোসেনের আগে পাঠানো হয় তানজিম সাকিবকে। তিনি এসে পারেননি। সন্দীপ লামিচানের গুগলিতে হন বোল্ড। ৬৯ রানে বাংলাদেশ হারায় ৭ উইকেট।

শেষ দিকে জাকের আলি অনিক উইকেটে টিকলেও তুলতে পারেননি রান। ২৬ বলে ১২ রান করেন এই ব্যাটার। ৭৫ রানে বাংলাদেশ হারায় ৮ উইকেট। এরপর রিশাদ হোসেন ছক্কা-চারে দেখান ঝাঁজ। কিন্তু ঠিকমতো ঝড় তুলতে পারেননি তিনি। ১৮তম ওভারে লং অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ব্যাটার। তাসকিন আহমেদ ১৫ বলে যোগ করেন ১২। শেষ দুই উইকেটে মহা মূল্যবান ৩১ রান ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তাতেই বাংলাদেশ ১৯.৩ ওভারে ১০৬ রানে থামে।

এই বিভাগের আরো খবর