ইয়ুথ প্ল্যানেট’ মাসিক স্বাস্থ্যসুরক্ষা জরিপের ফলাফল প্রকাশ

নারীর স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষায় সচেতনতা জরুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক: মৌলিক অধিকার হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের বেশিরভাগ নাারী। গ্রামে এই বঞ্চিত নারীর সংখ্যা বেশি হলেও শহরের নাগরিক জীবনে শিক্ষিত নারীদের মধ্যেও এই বঞ্চনার হার কম নয়। তাই নারী স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষায় সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর প্রতি জোর দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ব মাসিক স্বাস্থ্যসুরক্ষা দিবসে মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ মিলনায়তনে মাসিক স্বাস্থ্যসুরক্ষা জরিপের ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে ইয়ুথ প্ল্যানেট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার কামরু জাহান ফ্লোরা, ব্র্যাক হেলথ প্রোগ্রামের নলেজ ম্যানেজমেন্ট ও কমিউনিকেশন বিভাগের ম্যানেজার দীপন্বিতা ঘোষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম কাজল, ভিকারুন্নেসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক সঙ্গিতা ইমাম এবং ক্রিশ্চিয়ান এইডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মুশফেকুর রহমান। অনুষ্ঠানে ইয়ুথ প্ল্যানেটের পক্ষ থেকে জানানো হয় মাসিক স্বাস্থ্যসুরক্ষা জরিপটি পরিচালিত হয়েছে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার পুর্ব দরিলা গ্রামে। এতে বিভিন্ন বয়সের ৯৭৫জন নারী অংশ নিয়েছেন। জরিপে প্রকাশ পেয়েছে স্যানিটারি প্যাড ব্যহার না করার সবচেয়ে বড় কারণ এর ব্যয়বহুলতা। প্রায় ৩১.৭% নারী এ কারণে প্যাড ব্যবহার করেন না। এছাড়া দোকানে প্যাড চাইতে গেলে ইভটিজিংয়ের ভয়, অভিভাবকের কাছে বলতে সংকোচ ও অন্যান্য কারণেও অনেকে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেন না। মাসিক নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে ৮৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী পরিবারের নারী সদস্যের সাথে আলোচনা করেন। আর ৬ শতাংশ আলোচনা করেন তার পরিবারের পুরুষ মূলত স্বামীর সাথে। মাসিক সংক্রান্ত শারীকির জটিলতায় ভুগছেন ১৭.৫ শতাংশ নারী। এর মধ্যে মাত্র ৮.২শতায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক। অনুষ্ঠানে আরো জানানো হয়ইয়ুথ প্ল্যানেট দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় মাসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে আসছে। ফলে এই এলাকায় স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহারকারী নারীর সংখ্যা ৫০.৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। জরিপে আরো দেখা যায় কিশোরী এবং তরুণীদের মধ্যে স্যানিপারি ন্যাপকি ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। ৯-১৮ বছরের বয়সীদের মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবহার করেন ৬৮.৯ শতাংশ, ১৯-৩০বছর বয়সীদের মধ্যে এ হার ৫০.৫ শতাংশ এবং ত্রিশোর্ধ নারীদের মধ্যে এ সংখ্যা মাত্র ১৪.৫ জন। যারা ন্যাকড়া বা পুরাতন কাপড় ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেন ৪৭ শতাংশ নারী। ন্যাকড়া বা পুরাতন কাপড় ব্যবহারের প্রবণতাও ত্রিশোর্ধ নারীদের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয়। ব্যবহৃত প্যাড ফেলার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করেন ৭১ শতাংশা নারী। ইয়ুথ প্ল্যানেটের এবিএম মাহমুদুল হাসান জানান মূলত এই জরিপ পুরো দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না। কেননা বিগত তিন বছর ধরে ইয়ুথ প্ল্যানেট এই এলাকায় মাসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা উন্নয়নে কাজ করে আসছে। শুরুতে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কোন জরিপ না করলেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, কর্মশালায় প্রশিক্ষণে নারীদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময় করে বুঝেছি এই সংখ্যা ছিল খুবই কম। প্রকল্প এলাকায় তিন বছরে আমরা স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহার ২০% বাড়িয়েছি। আগে ব্যবহৃত স্যানিটারি প্যাড যত্রতত্র ফেলে রাখতে দেখা গেলেও ব্যবহারের পর মাটিতে পুতে রাখার হার এখন ৭০ শতাংশ। সামাজিক সচেতনতামুলক কর্মকা-ের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে জয়বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে এই সংগঠনটি।

এই বিভাগের আরো খবর